ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ আলী ইমাম এবং শিশুসাহিত্য-দুটোই সমার্থক। প্রায় ৪৫ বছর ধরে নিরন্তর স্বপ্নবিলাসী শিশুসাহিত্য রচনার এক দক্ষ রাজকুমার তিনি। শিশুমানস, শিশুজগত, শিশুকল্পনাকে ধারণ করে বহু বিচিত্র রচনা সম্ভারে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি বাংলা শিশুসাহিত্য। চিরায়ত রচনাভঙ্গি, ধ্রুপদ কাহিনী নির্মাণ এবং ক্লাসিক্যাল শিশুসাহিত্যের মর্মকে তিনি কর্মে রূপান্তর করেছেন। তিন শতাধিক গ্রন্থের আয়নায় আলী ইমামকে প্রতিবিম্বিত করলে বিস্মিত হতে হয়। শিশুসাহিত্য জগতের যাবতীয় অনুষঙ্গ ও কলকজাকে সযত্নে তিনি আত্মস্থ করেছেন। শব্দজালে বন্দি করেছেন মধুর রূপকল্পনাকে। আলী ইমাম সেই বিরল বাক্য শ্রমিকদের একজন-ত্যাগ ও মোহের ছলনে যিনি শিশুসাহিত্যের স্বপ্নময় পথ থেকে কখনই সরে দাঁড়াননি। কমল্পিট শিশুসাহিত্যিক বলতে যা বোঝায় আলী ইমাম তারই স্বয়ম্ভু প্রতীক। শুধুই অর্থহীন কল্পনার উড্ডীন ফানুস নয়, আলী ইমামের রচনা বাস্তব পৃথিবীর ধুলিকণাকেও স্পর্শ করেছে। আলী ইমামের মূল ক্ষেত্র গদ্য রচনা। গল্প, উপন্যাস, ফিচার, ভ্রমণকাহিনি, বিজ্ঞান বিষংক রচনা, প্রবন্ধ-বিন্দু বিন্দু বহু রত্নকণায় তিনি আমাদের শিশুসাহিত্যকে বিন্দু বহু রত্নকণায় তিনি আমাদের শিশুসাহিত্যকে পত্র-পুষ্প-পল্লবে সজ্জিত করেছেন। আলী ইমাম নিজস্ব অবস্থান তৈরি করেছেন স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে । নিষ্ফলা, অনুর্বর, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিবাবকহীন, আমাদের শিশুসাহিত্যকে তিনি সাবালক করেছেন। অজস্র, অবিরাম, ক্লান্তিহীন রচনা তার। দূর লক্ষ্যপনে একাকী অভিলাষী যাত্রা তার। আলোর মশাল হাতে, গভীর ও সুপ্তি-ভাঙানিয়া, তিমিরবিদারী অভ্যুদয়ের সৈনিক তিনি। এক সামগ্রিক জীবন-মগ্নতায় শিশুচৈতন্যকে যিনি লালন করেন, তার মতো সার্থকনামা শিশুসাহিত্যিক সমগ্র বাংলাসাহিত্যের প্রেক্ষাপটেই খুঁজে পাওয়া ভার। দ্বিধাহীন বাক্যে লেখা যায়, আলী ইমাম একমেবাদ্বিতীয়ম।
আলী ইমাম
আলী ইমাম। জন্ম : ৩১ ডিসেম্বর ১৯৫০ ব্রাহ্মণবাড়িয়া। পিতা : মরহুম আলী আকবর, মাতা : শাহজাদী বেগম। শিশু সংগঠক, সুবক্তা এবং ৬০০টির অধিক শিশুসাহিত্যবিষয়ক গ্রন্থের রচয়িতা। সাহিত্যের সবকটি শাখা, ছড়া-কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, জীবনী, ভ্রমণকাহিনি, অনুবাদ, বিজ্ঞান কল্পকাহিনি রচনা করেছেন। প্রথম গ্রন্থ প্রকাশ: ১৯৭৬ সালে গল্প সংকলন ‘দ্বীপের নাম মধুবুনিয়া। প্রকাশক বর্ণ মিছিল, ঢাকা। বাংলা একাডেমির ফেলাে। দেশের বিশিষ্ট সব পত্রপত্রিকায় লিখেছেন প্রচুর। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহাব্যবস্থাপক। তাঁকে পেশাগত কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরতে হয়েছে। তার সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক, ইকো সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ স্বর্ণপদক, নওয়াব সলিমুল্লাহ পদক, জসীমউদদীন স্মৃতি সংসদ পুরস্কার, হােসেন আরা শিশুসাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, ছােটদের কাগজ শিশুসাহিত্য পুরস্কার, লুবনা জাহান সাহিত্য পুরস্কার, ইউরাে শিশুসাহিত্য পুরস্কার এবং নওয়াব ফয়জুননেসা স্বর্ণপদক, চন্দ্রাবতী শিশুসাহিত্য পুরস্কারসহ আরও অনেক পুরস্কার।