একদল রহস্যময় মানুষ। প্রকৃতির মাঝেই এরা জীবনের বৈচিত্র্যের সন্ধান খোঁজে। পৃথিবী মানে রহস্যের মায়াজাল। অজানা রহস্যের প্রতি কৌতুহল সবারই রয়েছে। কিন্তু এই অজানাকে জানতে হলে সম্মুখীন হতে হয় বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতির। একমাত্র সাহসী মানুষের পক্ষেই বিপদকে তুচ্ছ করে রহস্যের মোড়ক উন্মচন করা সম্ভব।
“পিকিংম্যান রহস্য” গল্পের সূচনা হয় “কাজল এখন চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে” বাক্যটি দিয়ে। বাংলাদেশী দুই কিশোর অর্জুন ও কাজলের চীনের অবস্থানের মাধ্যমে গল্পের কাহিনী চলতে থাকে। তাদের চীনে অবস্থানকালীন লুচি নামক এক কিশোরের সাথে পরিচয়ের মাধ্যমে গল্পের নতুন মোড় নেয়। ঘটনাক্রমে লুচির থেকে জানা যায় চীনের চুকদিয়ানে পাঁচ লক্ষ বছর আগে পিকিংমানবের হাড় ও দাঁতের সন্ধান। পিকিংমানব লুচির কাছে অভিশাপ স্বরূপ। লুচির মতে দাদা-দাদি,বাবা-মা মায়া যায় এই পিকিংমানবের অভিশাপে। এমন কি লুচির কাকা এর জন্য ডুগু নামক ভয়ংকর মাফিয়ার নিকট বন্দী। এক সময় লুচি,অর্জুন,কাজল পিকিংমানবের হাড় ও দাঁত সন্ধানে এক রুদ্বশ্বাস অভিযানে জড়িয়ে যায়। ওদের সাথে যুক্ত হয় জাদুঘরের কিউরেটর রিও লুকাস। টান টান উত্তেজনা আর রুদ্বশ্বাস অভিযানের শেষে কি সত্যিই ওরা খুঁজে পেয়েছিল পিকিংমানবের হারিয়ে যাওয়া হাড় আর দাঁত?
এতিম লুচির কাকাকে কি মাফিয়াদের থেকে উদ্ধার করতে পেরেছিল?
ভয়ংকর মাফিয়া ডুগুরই বা কী হয়েছিল?
সব রহস্য জানতে হলে পাঠককে অপেক্ষা করতে হবে বইয়ের শেষ পাতা পর্যন্ত।
গল্পে প্রধান চরিত্র অর্জুন,কাজল,লু চিং (লুচি)।এছাড়াও মাছি,রিও লুকাস,ডুগু চরিত্রের স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে লুচি নামক চরিত্রটি আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। অনেক রহস্য লুকিয়ে ছিল এ চরিত্রের মাধ্যমে। প্রতিটা সময় মনে হয়েছে লুচি কি সত্যি বলছে! এরপর কী হবে!
উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু নিয়ে তো বলা হল,এবারে আসা যাক ভাষাশৈলি ও অন্যান্য প্রাসাঙ্গিক আলোচনায়। প্রমিত বাংলা ভাষায় রচিত “পিকিংম্যান রহস্য” উপন্যাসে কোথাও কোথাও কথোপকথনের মাঝে ইংরেজি ভাষায় বাংলা লেখা লক্ষ্য করা যায়। অত্যান্ত সহজ,সরল ভাষায় শব্দ চায়নের ক্ষেত্রে ঔপন্যাসিকের যথেষ্ট সতর্কতা চোখে পড়ে। এক কথায় ভাষার প্রঞ্জালতা রক্ষার্থে ঔপন্যাসিকের চেষ্টা সত্যিকার অর্থেই পাঠকের নজর কাড়বে।
জনপ্রিয় লেখক অরুন কুমার বিশ্বাসের সৃষ্টকর্মের মধ্যে অন্যতম উপন্যাস “পিকিংম্যান রহস্য”। এ উপন্যাসের মাধ্যমে লেখক চীনের খাবার,জীবন যাত্রা সম্পর্কে তুলে ধরেছেন। এছাড়াও চীনের প্রাচীর সম্পর্কে তুলে ধরেছেন। কিশোর বয়স যে শুধু আবেগে অতিক্রমের সময় নয়,এ বয়স সকল বিপদকে উপেক্ষা করে বীরের পরিচয় গড়ার বয়স।
অরুণ কুমার বিশ্বাস
অরুণ কুমার বিশ্বাসের জন্ম ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৭৭ গােপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ায় জহরের কান্দি গ্রামে। এসএসসি ইস্ট কোটালীপাড়া ইউনিয়ন হাই স্কুল, ১৯৯৩। এইচ,এস,সি নটরডেম কলেজ, ঢাকা, ১৯৯৫। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে সম্মানসহ এম এ, ২০০১। মেধার স্বীকৃতি হিসেবে নটরডেম কলেজ থেকে পেয়েছেন অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সেলেন্স। শুল্ক বিভাগের ডেপুটি কমিশনার এই লেখক সম্প্রতি ইংল্যান্ডের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত লন্ডন মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিউম্যান রিসাের্স ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স ডিগ্রী (পাস উইদ মেরিট) অর্জন করেন। ব্র্যান্ড একুইটি মডিউলে পান ডিসটিশন নম্বর। কলেজে পড়ার সময় থেকে নিয়মিত লিখছেন। ছড়া, কবিতা, ছােটগল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা, গােয়েন্দা কাহিনী । উল্লেখ্য, কিশাের উপন্যাসে তিনি বিশেষ স্বচ্ছন্দ। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা পঁচিশ বলতে গেলে পাড় পাঠক তিনি। বিশ্বসাহিত্যের সকল ভাষা ও শাখায় বিচরণ করে অমিত আনন্দ পান। গর্সিয়া মার্কেজ থেকে দস্তয়েভস্কি, এরিস্টটল থেকে স্টিফেন হকিংস, তদুপরি বাংলা সাহিত্যের অফুরান রসভাণ্ডার তাকে সারাক্ষণ আবিষ্ট করে রাখে। তিনি লিখতে ভালবাসেন, তবে পাঠের আনন্দ অবিমিশ্র, অসীম।ভ্রমণ তার প্রিয় শখ, খানিকটা নেশার মতাে। নতুন দেশ, নতুন মানুষ তার গবেষণার বিষয়। ভ্রমণ করেছেন ইংল্যান্ড, ওয়েলস, দুবাই ও সাউথ আফ্রিকা। জীবনটাকে স্রেফ সরাইখানা মেনে কোথাও শেকড় গেড়ে থিতু হবার বাসনা নেই একদম । এমনি করে যায় যদি দিন যাক না!