প্রত্নতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, লোক-ঐতিহ্য, ইতিহাস, প্রাচীন সাহিত্য, সমাজ-সংস্কৃতি তথা স্বদেশ-ভাবনার ব্যতিক্রমী গবেষক সমর পাল তার অন্যান্য চর্চা-ধারার সাথে ক্রমাগত যুক্ত করে চলেছেন বাংলাবাসীকে। ১৩৪০ বঙ্গাব্দে (১৯৩৩ খ্রি.) রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার অখ্যাত পল্লী রায়পুর থেকে মুন্সি মহাম্মদ আপ্তাবউদ্দিন মিঞা তালুকদার কর্তৃক প্রণীত ও প্রকাশিত বিস্মৃতপ্রায় দুর্লভ পুঁথি পায়রাবন্দ কাহিনী সংগ্রহ, সংকলন ও সম্পাদনা করে পাঠক-সমাজে উপস্থাপনের দুরুহ কাজটি করে সমর পাল আমাদের সামনে মেলে ধরেছেন পায়রাবন্দ জমিদারির বিপুল রহস্য। আরবি ধাঁচের পুঁথির অসংখ্য বিদেশি ও আঞ্চলিক শব্দের অর্থ এবং পায়রাবন্দ পরগনার মৌজাগুলোর নাম ও আয়তন পরিশিষ্টে সংযোজনের শ্রম ও মেধাশক্তি অনেক গবেষককে প্রাণিত করে নিঃসন্দেহে। অমিত গৌরবের বেগম রোকেয়ার পিতা, পিতৃব্য, ভাই এবং জমিদারি বিলাস-অত্যাচার-অনাচারের কাহিনী সরলভাবে উপস্থাপন করে মুন্সি আপ্তাবউদ্দিন মিঞা তালুকদার যে উপমা সৃষ্টি করেছেন সেটিই এ পুঁথির বিশেষত্ব। বিশেষ করে প্রতি ঘটনার শেষে শিক্ষাণীয় আদর্শ তুলে ধরার ক্ষেত্রে পুঁথিটি অনবদ্য।
আমাদের বিস্মৃতপ্রায় পুঁথিসাহিত্যের এই নবতর পাঠ ঐতিহ্যচেতনার অংশ হিসেবে গণ্য বলেই বিশ্বাস করা যায়।