একজন মহৎ কবি হওয়ার জন্য তােমাকে অবশ্যই একজন মহৎ মানুষ হতে হবে। '—বিদগ্ধ সমালােচক টেনির এই উক্তি সম্ভবত একজন মানুষের বেলায়ই বিশেষভাবে প্রযােজ্য। আর তিনি হচ্ছেন ইংল্যান্ডের কবি জন মিলটন। | জন মিলটন ১৬০৮ সালের ৯ ডিসেম্বর লন্ডনের ব্রড স্ট্রীটের এক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। মিলটনের যখন জন্ম হয়, তখন সারা লন্ডন শহর শেপীয়রের সৃষ্টি-বর্ণচ্ছটায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। পিতা-মাতার ছয় সন্তানের মধ্যে মিলটন ছিলেন তৃতীয়। বাড়ির পরিবেশ ছিল মুক্ত, স্বাধীন। বাড়িতেই শিক্ষা ও সঙ্গীতের একটা পরিমণ্ডল গড়ে উঠেছিল। এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, ‘ছেলেবেলা থেকেই আমার বাবা আমাকে সাহিত্যের প্রতি অনুসন্ধিৎসু করে তােলেন। শৈশবে তাঁকে লন্ডনের বিখ্যাত সেন্ট পলস্ স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়। স্কুলের চেয়ে বাড়ির পরিবেশই ছিল শিক্ষার অনুকূল। তিনি ষােল বছর বয়সে কেমব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হন। সেখানকার পরিবেশ তার মনােমত ছিল না। তার সৌন্দর্য, আচার-ব্যবহার আর মধুর কথাবার্তার জন্য সকলেই তাকে ভালবাসতাে। মিলটনের নাম সমস্ত কলেজে ‘কেমব্রিজের নারী’ (The Cambridge Lady) হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে। চব্বিশ বছর বয়সে কেমব্রিজ ক্রাইস্ট কলেজ থেকে যথাসময়ে তিনি বি. এ. ও এম. এ. ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি শুধু সাহিত্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পেলেন না, আটটি ভাষায়ও দক্ষতা অর্জন করলেন। এ সময় তিনি ‘অন দি ক্রাইস্ট নিটিভিটি’ এবং ‘লা অ্যালেগ্রো’ ও ‘ইল পেনসারােসাে’ কবিতা দুটো রচনা করে দেশের কাব্য-রসিকদের প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁর পিতার ইচ্ছা ছিল, মিলটন সাহিত্য সৃষ্টির সাথেই যাজকের জীবন বেছে নেবেন। কিন্তু আজন্ম বিদ্রোহী মিলটন চার্চকে কোনদিনই শ্রদ্ধার চোখে দেখেননি। তিনি লন্ডনের সতেরাে মাইল দূরে হর্টন গ্রামে চলে যান। সেখানে তার বাবার একটা বাড়ি ছিল। সেই বাড়িতেই তার মা থাকতেন। এখানে পাঁচ বছর ধরে চলল তাঁর সাহিত্য, দর্শন, ভাষাতত্ত্ব, সঙ্গীত প্রতিটা বিষয়েই গভীর অধ্যয়ন। মিলটন লিখেছেন, এই পাঁচ বছর আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের সময়। বাবার কারবার আমাকে সমস্ত আর্থিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত রেখেছিল।
জন মিল্টন
জন মিল্টন (ডিসেম্বর ৯, ১৬০৮ – নভেম্বর ৮, ১৬৭৪) সপ্তদশক শতাব্দীর ইংরেজ কবি, গদ্য লেখক এবং কমনওয়েলথ অব ইংল্যান্ডের একজন সরকারি কর্মচারী। তার প্রসিদ্ধ কাব্য প্যারাডাইস লস্ট এর কারণে তিনি সমধিক পরিচিত। কয়েক শতাব্দী শীর্ষ ইংরেজ কবির অবস্থানে থাকার পর বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি টি এস এলিয়ট ও এফ আর লেভিস এর জনপ্রিয়তার কাছে তার শীর্ষস্থান হুমকির মুখে ছিল। কিন্তু বিভিন্ন সামাজিক ও সাহিত্য জার্নালের কল্যাণে মিল্টনের অবদান একুশ শতাব্দীতেও অটুট রয়েছে।
তার মৃত্যুর পর থেকে আজ পর্যন্ত মিল্টনের জীবন নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে।