ভূমিকা ‘পাপের সন্তান’ কে আমার ‘অভিশপ্ত নগরী’ উপন্যাসের দ্বিতীয় খণ্ড বলা চলে।এই দুটি উপন্যাসের ঘটনা-কালের ব্যবধান অর্ধশতাব্দীর কিছু উপর। ‘অভিশপ্ত নগরী’ উপন্যাসের শেষাংষ জেরুজালেম নগরীর পতনের কথা বর্ণিত হয়েছে। এ পতন সাধারণ পতন নয়, বাবিলরাজ নেবুকাডনাজার জেরুজালেমকে ধ্বংস্তূপে পরিণত করে দিয়ে নগরীর নাম নিশানা নিঃশেষে মুছে দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, স্ত্রী-পুরুষ-নির্বিশেষে নগরবাসীর ইহুদীদের রজ্জুবদ্ধ পশুর মত তাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন বাবিলে। দীর্ঘকাল ধরে সেখানে তাদের নির্বাসিত জীবন যাপন করতে হয়েছিল। ইহুদী জাতির ইতিহাসে এ একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়।
কালের চক্রে পাশার দান উল্টে গেল। পারসিকদের আক্রমণে বিশ্ব-বিশ্রুত মহাপরাক্রমশালী বাবিল সাম্রাজ্যের পতন ঘটল। বাবিল আর বাবিল সাম্রাজ্যভুক্ত এলাকা পারস্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। বাবিলের নির্বাসিত ইহুদীরা নিজ ভূমি জেরুজালেমে ফিরের যাবার অনুমতির জন্য আবেদন-নিবেদন করে চলল। অবশেষে পারস্যরাজ তাদের এই প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন এবং তাঁর ইহুদী পানপাত্রবাহক নেহেমিয়াকে জেরুজালেমে তীরশথ বা শাসনকর্তা নিযুক্ত করে পাঠালেন। তীরশথ নেহেমিয়ার নেতৃত্বে ইহুদীর জেরুজালেমের বিধ্বস্ত প্রাচীর নুতন করে গড়ে তুলল। কাজটা সহজ ছিল না। পারাস্যরাজ্যের স্থানীয় রাজকর্মচারীরা ও প্রতিবেশী পরজাতীয়েরা ইহুদীর -বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে এই কাজে বাধা দেবার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাদের সমস্ত বাধা অতিক্রম করে গড়ে উঠল নতুন জেরুজালেম নগরী।
ইহুদী জনসাধারণের প্রাণপাত প্রচেষ্টায় নতুন জেরুজালেম গড়ে উঠল বটে, কিন্তু ধর্মোন্মাদ ইহুদী সমাজপতিদের ধর্মের গোঁড়ামি, কঠিন রক্ষণশীল মনোভাব ও তীব্র পরজাতিবিদ্বেষ সমাজকে এক আত্নধ্বংসী আবর্তের দিকে ঠেলে নিয়ে চলল।শাস্ত্রীয় বিধান মানবিকতাকে গ্রাস করে চলল-ধর্মীয় অন্ধতার বেদীমূলে নিষ্পাপ , নিষ্কলঙ্ক ‘পাপের সন্তান’রা বলি হতে লাগল। দুর্ভাগ্য ইহুদী সমাজকে এজন্য ভবিষ্যতে বড় কঠিন মূল্য দিতে হয়েছিল-ইতিহাস আর সাক্ষী।