পাকিস্তান : আমার ইতিহাস (হার্ডকভার)
আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে পাকিস্তানের পশ্চাদপদতা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের মূল কারণ এবং এগুলোর বাস্তব সমাধান প্রসঙ্গে ইমরান খান যেসব কথা বলেছেন, তা মুসলিম বিশ্ব ও তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আপাদমস্তক ধর্ম-নিরপেক্ষ শিক্ষায় শিক্ষিত ইমরানের ইসলামের দিকে ফিরে আসা এবং তার উপমহাদেশীয় পরিবারিক মূল্যবোধের প্রতি আস্থা বিশেষভাবে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মায়ের নামে ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় নিরলস প্রচেষ্টা এবং ব্যয়ভার বহনে অক্ষম লোকদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থান, পাক-ভারত উপমহাদেশের হাজার হাজার তরুণের মনে উৎসাহ জাগাবে। ইমরানের পেশাগত জীবনের উত্থান-পতন ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা তরুণদের জন্য দৃষ্টান্ত ও অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। উদ্দেশ্যের প্রতি অবিচল থাকা, দৃঢ় মনোবল, সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সর্বোপরি সকল কাজে মহান আল্লাহ তায়ালার সাহায্য কামনা যেকোনো উদ্যোগ গ্রহণ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সফলতা অর্জনের মূল চাবিকাঠি। ইমরান তার জীবন অভিজ্ঞতা লব্ধ এসব কর্মপদ্ধতি লিপিবদ্ধ করার মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের জন্য হাতেকলমে শিক্ষার বন্দোবস্ত করেছেন। লিখেছেন আত্মজীবনী 'Pakistan: A personal History'। হাজারও তরুণের কাছে ইমরান ক্রিকেট মাঠের অধিনায়ক এবং বিশ্বকাপ বিজয়ী নায়ক হিসেবে বিবেচিত। তার প্রতি আমি ফোকাস রাখা শুরু করেছিলাম ক্যারি প্যাকারের রঙ্গীন পোষাকে ক্রিকেট খেলা শুরুর সেই দিনগুলো থেকে। তারপর ভারত, ইংল্যান্ড, ওয়েষ্ট ইন্ডিজ সফর, নেহেরু কাপে তার বিরোচিত নেতৃত্ব দেখেছি। ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপের উত্তেজনাপূর্ণ খেলায় সাধারণ মানের এক পাকিস্তান দলকে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে ইমরান যেভাবে একের পর এক বিরত্বপূর্ণ বিজয় ছিনিয়ে এনে দিয়েছেন, তাতে তার প্রতিভা, ব্যক্তিত্ব, শিক্ষা ও দায়বদ্ধতার এক অনন্য নমুনা ফুটে উঠেছে। পশতুন শৌর্য ও নেতৃত্বের গুণাবলির সাথে যেন আধুনিক ইউরোপীয় শিক্ষা ও শালীনতার এক অপূর্ব সমন্বয় সাধিত হয়েছে। এই আত্মজীবনীতে ইমরান খানের জীবনের সাথে প্রাসঙ্গিকভাবে পাকিস্তানি ও বিশ্ব রাজনীতির বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে; বিশেষত মুসলিম বিশ্ব সম্পর্কিত ঘটনাবলি। ইমরান পুরো বই লিখেছেন ধারা বর্ণনার স্টাইলে এবং প্রয়োজনীয় ইস্যুতে বিশেষজ্ঞ-সুলভ মতামত দিয়েছেন। বইটির প্রতিটি পাতায় পাঠকবৃন্দ ইমরানের উদারনৈতিক চিন্তাধারা, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান এবং সবার ওপরে মানবিকতাকে স্থান দেওয়ার মানসিকতাকে খুঁজে পাবেন। ইমরান একজন গর্বিত মুসলমান। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, প্রকৃত ইসলামি আদর্শের মধ্যেই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও বৈশ্বিক জীবনের মুক্তি নিহিত। তিনি গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা, আইনের শাসন, সহনশীলতা এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ওপর আস্থাকে সবকিছুর ওপর স্থান দিয়েছেন এবং যেকোনো দেশের এগিয়ে চলার ভিত্তি হিসেবে গণ্য করেছেন। তাছাড়া সামগ্রিকভাবে সারাবিশ্বে এবং বিশেষভাবে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় ইমরান যে কর্মসূচি পেশ করেছেন, তা এক কথায় অনন্য। বাংলাদেশ সম্পর্কে ইমরানের বিভিন্ন মন্তব্যে তার সুবিবেচনাবোধ ফুটে উঠেছে। তৎকালীন পাকিস্তানের এ অঞ্চলের জনগণের প্রতি শাসকশ্রেণীর বিমাতাসুলভ আচরণকে তিনি সাধারণ মানুষদের প্রতি অভিজাত গোষ্ঠী কর্তৃক চিরাচরিত বঞ্চনার মনোভাব বলে মনে করেন। ইমরানের ভাববাদ ইকবালের চিন্তাধারা দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। ইকবালের বাণীর মাঝেই তিনি পাকিস্তান তথা মুসলিম উম্মাহর মুক্তির পথ খুঁজে পেয়েছেন। পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জাতীয় ও আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানে তার পরিকল্পনা এই বইতে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। তার চিন্তা ও কর্ম পরস্পর সঙ্গতিপূর্ণ; তা সত্ত্বেও জীবন চলার পথে যেসব ভুল করেছেন, সেগুলো অকপটে স্বীকার করেছেন। এতে রাজনীতিবিদ হিসেবে তার সততা ও আন্তরিকতা প্রকাশিত হয়েছে। তার নেতৃত্বে পাকিস্তান এগিয়ে যাবে এবং তার সততা ও দেশপ্রেমের দৃষ্টান্তে উদ্বুদ্ধ হয়ে দুর্নীতিমুক্ত দেশ ও আদর্শ সমাজ গঠনে নেতৃত্বদানে ইচ্ছুক উপমহাদেশ ,তথা বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের জন্য বইটি এক অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে, ইনশাআল্লাহ।