“পাগলী, তোমার সঙ্গে (৪৩টি কবিতা)” বইয়ের ভূমিকা: কবিতাই একজন সৎ কবির মাথা তোলবার, বেঁচে ওঠাবার, ভালবাসার অনন্য অবলম্বন। কবিতাই কবির ব্যাপ্ত, বিশাল জীবনকাহিনী। এ-যুগের তরুণ কবিদের মধ্যে সব থেকে শক্তিমান জয় গোস্বামীর কবিতার সঙ্গে যাঁরা পরিচিত তাঁরাই জানেন, আধুনিক বাংলা কবিতায় তিনি অগ্রপথিক। সৃষ্টি-বৈচিত্র্যে, স্বতন্ত্রস্বাদ রচনায় এবং ছন্দো-ছন্দোহীনতায় তিনি বিশিষ্টতম। তাঁর ‘পাগলী, তোমার সঙ্গে’ কাব্যগ্রন্থের শরীরে ধরা আছে এইসব অনুভবী বৈশিষ্ট্য। এই গ্রন্থে আছে “মৃত্যুটি রচনা করি, নামের দীর্ঘ কবিতা। তার চেয়ে, কী দরকার ঘরে বসে লেখো তো মৃত্যুর/একটি রচনা, যার চতুর্দশ পদে পদে ভয়৷/সহস্ৰ জাতির থেকে ফোঁটা ফোঁটা জাতি রক্ত হয়/ সে রক্ত একটি পাত্রে ধরো তুমি, ঠেলে দাও দূর/দূর ভবিষ্যৎ কালে...।” এই কবিতার ছন্দ তুলেছিল বিতর্কের ঝড়। তেমনই আর একটি দীর্ঘ কবিতা ‘পাঁচালি: দম্পতিকথা” ছান্দসিকদের জড়িয়ে নিয়েছিল বিসংবাদে। যে-কবি এখানে উচ্চারণ করেছেন মৰ্মমূল থেকে ছিঁড়ে আনা শব্দবন্ধ ‘পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব/পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোবালি জীবন কাটাব”—তিনি গেয়ে উঠেছেন এক নিভৃত নিশ্চুপ সামগাথা: “ওই মেয়েটির কাছে/সন্ধ্যাতারা আছে।” এই কাব্যগ্রন্থ এক সৎ কবির নিবিড় আত্ম-আবিষ্কার।
সূচি পত্ৰ: * মা আর মেয়েটি * দুখানি হাতের সরোবরে * শুকনো পাতার ডালে * স্পর্শ * কলঙ্ক, আমি কাজলের * মাসিপিসি * পথ * ঘুমন্ত দেবতা * কুকুরছানাদের গল্প * কে জন্মায়, হে বৈশাখ * র্যাগিং * হাঁস * মৃত্যুটি রচনা করি * ঋণ * এসেছি, কুসুম * দোল: শান্তিনিকেতন * গীতিসূর্য: প্ৰেমসংখ্যা * ঋষি ও রাঙা মেঘ * ভোজসভা * তেজ * জাতিস্মর * ও আকাশপার * আকাশতীরের বন্ধু * গুপ্তচর * ঢেউ গুচ্ছ * যশোগীতি * এক লাইন, দু লাইন * দিকভ্ৰম * রানীকুঠি * একফোঁটা * পাঁচালি: দম্পতিকথা * প্রাক্তন * বন্ধু * জ্বলো * জলহাওয়ার লেখা * সূর্যঢেউ, দূর্বাদল * সবচেয়ে উচু তারাকে আমি বলি * সূৰ্য * রূপকথা * বয়ঃসন্ধি * মৃত্যু সব লেখাপড়া * “চোখ পালটায়ে কয়’ * লোকজন
জয় গোস্বামী
জয় গােস্বামীর জন্ম ১০ নভেম্বর ১৯৫৪, কলকাতায় ৫ বছর বয়স থেকে সপরিবারে রানাঘাটে। বর্তমানে পুনরায় কলকাতাবাসী। শিক্ষা: একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত, রানাঘাটেই। প্রথম। কবিতা ছাপা হয় উনিশ বছর বয়সে একই সঙ্গে তিনটি ছােট পত্রিকা, সীমান্ত সাহিত্য, পদক্ষেপ ও হােমশিখা। পরবর্তী ১৫/১৬ বছর বহু লিটল। ম্যাগাজিনে অজস্র লেখা ছাপা হয়েছে। দেশ পত্রিকায় লেখা ১৯৭৬ থেকে ডাকযােগে প্রথমে অনিয়মিত পরে নিয়মিতভাবে। দেশ। পত্রিকাতে চাকরিও করেছেন ১৬ বছর। এখন ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এ কর্মরত। প্রধানত কবি। কয়েকটি উপন্যাস বেরিয়েছে,। অন্যান্য নানা গদ্য লেখাও।। আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন দু’বার। ১৯৯০-এ ঘুমিয়েছাে, ঝাউপাতা?’ কাব্যগ্রন্থের জন্য এবং ১৯৯৮-এ “যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’ কাব্যোপন্যাসের জন্য। ১৯৯৭-এ পেয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার, ‘বজ্রবিদ্যুৎ-ভর্তি খাতা’ কাব্যগ্রন্থের জন্য। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯৭)। ‘পাতার পােশাক এবং সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (২০০০) ‘পাগলী, তােমার সঙ্গে কাব্যগ্রন্থের জন্য।। আমেরিকার আইওয়া আন্তর্জাতিক লেখক শিবিরে আমন্ত্রিত হয়েছেন ২০০১ সালে। ২০০৯ সালে গিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবাের্ন। ও সিডনিতে বাংলা সাহিত্য সংসদ ও বাংলা একাডেমি অস্ট্রেলিয়ার ডাকে ২০১০ সালের মে মাসে বেইজিং ও সাংহাইতে আয়ােজিত । ‘অলমােস্ট আইল্যান্ড ডায়লগ’-এ যােগ দিয়ে চিন দেশের কবি-লেখকদের সঙ্গে কাব্যপাঠ ও। আলােচনায় অংশ নিয়েছেন।