অর্ধবৃত্ত (হার্ডকভার)
সম্পর্কের এই বেড়াজালে আমরা সবাই আটকে গেছি। না জানি এর শেষ বা শুরু কোথায়। কাউকে ছেড়ে ভালো থাকাও যাচ্ছে না,আবার নতুন কারও সাথে সম্পর্কে গিয়েও অতীতকে অবহেলা করা যাচ্ছে না। যেন অদ্ভুত সব ব্যাপার জীবনকে জটিল করে রাখছে। ৩৮৪ পেজের বইটা যেন জীবনের নতুন এক অংশ হয়ে উঠেছে৷ এর থেকে আর কি পাওয়ার আছে একজন লেখকের কাছে? এমন একটা লেখক সবার দরকার। তাকে হারিয়ে ফেললে , " নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিতে ছেয়ে যাবে আমাদের শহর। " "আমি একদিন নিখোঁজ হবো,উধাও হবো রাত প্রহরে, সড়ক বাতির আবছা আলোয়,খুজবে না কেউ এই শহরে। ভাববে না কেউ,কাঁপবে না কেউ,কাঁদবে না কেউ একলা একা, এই শহরের দেয়ালগুলোয়,প্রেমহীনতার গল্প লেখা।"
সাদাত হোসাইনের বই আগে পড়া হয়েছে। সম্পর্কের বিভিন্ন দিক উনি খুব ভালো মতন তুলে ধরতে পারেন।তার লিখনি বেশ ভাche।যারা প্রেমের গল্প পরতে ভালবাসেন তাদের বইটি বেশ ভালো লাগবে।কিন্তু অন্যদের কাছে সেই একি সাধারণ গল্প মনে হবে।আমি তার "নির্বাসন"বইটি পড়েছি, আমার সেই বইটি বেশি ভালো লেগেছে।
অর্ধবৃত্ত বইটি লিখেয়েছেন সাদাত হোসাইন।এই বইটিতে আমরা আমাদের মনস্তাত্তিক জগতের যে সম্পর্কের টানাপোড়নে ভুগি তার অনকটাই বলা হয়েছে হয়তো নতুন কোনো সম্পর্কের মলাটে।সবচেয়ে সহজ সরল যে সম্পর্ক সেটারও যে এতোটা জটিল রূপ হতে পারে কিংবা জটিল সম্পর্ককে চাইলেই যে এতো সহজ একটা সমাধানে নিয়ে আসা যায় সেটাই বলা হয়েছে। বইটি পড়তে গিয়ে অনেক নতুন অনিভূতির সাথে পরিচিত হয়েছি,যা Sadat Hossain ভাইয়ার অন্য বইতে হয় নি। বরাবরের মতোই ভাইয়ার লেখনশৈলী চমৎকার।বইটির কিছু জায়গায় চুম্বকের মতো টেনেছে আমাকে। আবার ঠিক একইভাবে কিছু জায়গায় আমি হারিয়ে গেছি, খেই হারিয়ে ফেলছি এমনও মনে হইছে। কিছু কিছু জায়গা পড়তে হয়েছে এক রকম কেমন যেনো দমবন্ধ করা কষ্ট নিয়ে। আর একটা ব্যাপার মনে হইছে যে, ভাইয়া তাড়াতাড়ি করে না চাইতেও যেনো শেষটা টেনেছেন।আরও একটা নতুন ব্যাপার হচ্ছে,ভাইয়ার অন্য বইগুলাতে শেষটাতে ভাইয়া পাঠকের একটা ভাবনার জগৎ তৈরি করে দেন৷ তিনি বাধ্য করেন পাঠককে পাঠকের মতো করে ভাবতে। কিন্তু এই বইটিতে ভাইয়া এরকম না করে একটা নির্দিষ্ট সমাপ্তি টেনেছেন। [একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতির জায়গা থেকে বলা
প্রসঙ্গকথায় '#অর্ধবৃত্ত'। উপন্যাসের রচয়িতা 'সাদাত হোসাইন'। পাঠ-পর্যালোচনাঃঃ তকিব তৌফিক শুরুতেই লেখককে জানাতে চাই, অর্ধবৃত্ত উপন্যাস ইংরেজি সাহিত্যের বই হলে এই বই অথবা উপন্যাস যেভাবেই বলি এর নাম 'Maze' বা 'The Maze of Relationship' দেয়া যেতো। এটা পাঠকের জায়গা থেকে বলছি। মূল কথায় আসা যাক, অর্ধবৃত্ত একটি মাথা নষ্ট করা গল্প মনে হল। কেনো এমন মনে হলো আমার! একটা কৌতূহল তো থেকেই যায়! উপন্যাসের গল্পকে কেন্দ্র করে ব্যাপারটা আলোচনা করা যেতে পারে, তবে আমি কয়েকবাক্য নিজের কিছু অনুধাবনের কথা বলছিঃ আমি একটা কথা বিশ্বাস করি যে, একজন মানুষ তার এক জীবনে নানান সত্তা বয়ে বেড়ায়। জীবনের যে বয়স স্তর তার সাথে সাথে এই সত্তার পরিবর্তন আসে৷ এবং এই পরিবর্তন আর আচার-আচরণগুলো কিংবা যদি বলি ভাবনা-চিন্তার ক্ষমতাটা একটু বার ক্ষেত্রেই হয় তবে এলেমেলো কিংবা আগে পরে। তাতপর একটা সময় নির্দিষ্ট একটি সত্তায় স্থির হয়। এবং তা বয়ে বিয়ে যায় জীবনের অন্তিমে। এই ধারায় দুটো মানুষের জীবনের সত্তা হয়ে যায় আলাদা। দুই দেহের দুইটি প্রাণের সত্তা গুলো তখনই পার্থক্যের বিবেচনায় পরে। বিষয়গুলো সম্পূর্ণ আমার ভাষ্যে বলা, যা জীবনের নিয়ম বলে আমি ধরে নিই কিংবা পোষণ করি। বলছিলাম অর্ধবৃত্ত উপন্যাসে'র ভেতরের গল্পের কথা! এই গল্পের চরিত্রগুলো নিয়েই আমি নিজে ভারি সংকটে পরি। প্রতিটি চরিত্র যার বিপরীতে কিংবা যার সাথে সম্পর্ক জড়িয়ে আছে তাদের সাথে এক অদ্ভুত দু'টানা; সংকটময়। না না, উভয় সংকট বললেই মনে হয় যাথার্থ হবে। কিন্তু কেনো এমন হবে? কি জন্য এমন হতেই হবে? তার প্রত্যুত্তরে এটাই কি ধরে নিতে হবে যে, মানুষ তার স্থিরকৃত সেই সত্তার প্রভাবে সেভাবেই পরিচালিত হয়ে বিপরীত মুখো! হ্যাঁ তাই তো! দু'জন মানুষ, দু'টি মানুষ মন, দু'মুখো সত্তা হলে তো এমনটাই হবে। আর গল্পে এমনটাই এসে গেছে। এমন এটাই রোজকার চোখের দেখা; আর চোখের দেখা মানেই অধিকাংশেরও বেশি বাস্তবতা বয়ে বেড়ায়। অর্থাৎ এটাই বাস্তবতা; যা লুতুপুতু গল্প নয়। গল্পের শুরুর দিকে মুনিয়ার এহেন আচরণ! একজন রাফির ঘোরে কিংবা একজন রাফির সৃষ্ট কবিতার ঘোরে থাকা এটা খুব অস্বাভাবিক মনে হতে গিয়েও হয় না কেন না মুনিয়ার মত করেই হয়ত রাফিকে নিয়ে ভাবতে শিখে যায় তারই মেয়ে ঋদ্ধি। রাফি তো ঋদ্ধির বান্ধবীর ভাই' এমনটা তার হতে পারে; কিছু অনুভূতি জাগ্রত হতেই পারে। কিন্তু মা হয়ে মুনিয়ার এমনটা হয় কেনো? কিভাবে? কিন্তু এমন গল্প এই শহরে, নগরে, গ্রাম কিংবা পল্লীতে হাজারো আছে। উহ্যতা বয়ে বেড়ায় বলে হয়তো বাতাসে মিলায়। গল্পের ভেতর থেকে আরো বলা যায়, তাতে কি যারা এখনো সাদাত হোসাইনের 'অর্ধবৃত্ত' পড়েনি তাদের পড়াবার ইচ্ছার যে কৌতূহল তা কি নষ্ট হবে? অর্থাৎ ব্যাপার টা স্পয়লার হচ্ছে কিনা তাই ভাবছি। আমার আবার এই জায়গায় বদনাম রয়েছে। আমি পাঠ-পর্যালোচনা করতে গিয়ে বিশদতার ঘোরে নাকি সব বলে বসি। তাই তো থেমে ছিলাম; কিন্তু সাদাত হোসাইনের 'অর্ধবৃত্ত' শেষ করবার পর আর থেমে থাকা যায়! প্রসঙ্গকথায় আসা যাক মুনিয়া- রাফি কিংবা ঋদ্ধির কথা না হয় সেটুকুতেই থামাই। কিন্তু সুমির কথা কি বলবো! কি বলবো আমি বেগমের ব্যাপারে কিংবা একজন আফজল হোসেব ও মছিদা বিবির পঞ্চাশ বছরের সংসারের ব্যাপাররে, যেখানে বুঝবার দায় পরে যায় সম্পর্ক কি টিকে থাকে ভালোবাসায় নাকি মায়ায়? মায়া আর ভালোবাসা কি এক? হয়তো; হয়তো না। একটু রাফি প্রসঙ্গে বলি। লেখক তার উপন্যাসে রাফি চরিত্রকে ক্ষ্যাপাটে, বুনো, খামখেয়ালি এক বাউন্ডুলে বলেছেন। আর আমি পাঠক হয়ে বলতে চাই, এমন রাফিকে হয়তো আমরা অনেকবার দেখি, অনেক জায়গায় দেখি। চিনতে পারি কিংবা পারি না। যদি চিনেও থাকি বুঝতে পারি না। বুঝে উঠলেও হয়তো না বুঝবার ভান করে থাকি। কারণ এই মরণ কুণ্ডলীতে বাউণ্ডুলে নিয়ে ভাববার সময় যেনো কারোর নেই। কেবল লেখকরাই তাদের নিয়ে ভাবেন, তাদেরকে শব্দের জোরে, বাক্যের মাধুর্য দিয়ে সাজিয়ে গল্পের মাঝে কালের দলিল করে আগামীর জন্যে রেখে দেয়। এটা একজন লেখকই পারেন। লেখক সাদাত হোসাইন যেটা করতে চেয়েছেন, প্রতিটি চরিত্রকে স্বাধীন ভাবে একটা Maze game এর মধ্যে যেনো ছেড়ে দিয়েছে। তারপর হাত গুটিয়ে তাদের পাগলপ্রায় আর রহস্যময়ী অদ্ভুত কাণ্ডকারখানা দেখে নিজেই হাসছেন; কখবো আবার নিজেই রহস্যের ফাঁদেও পরে যাচ্ছেন। তবে তিনি জানতেন এই ঘুরপাক কিংবা ঘোরপ্যাঁচের সমাধানটা কোথায়। শুধুশুধুই মাথা গুলিয়ে দেয়ার জন্য সম্পর্কের দু'টানা জুড়ে রহস্য এঁটে দিয়েছেন। দিনশেষে এটাই দাঁড়ায়। চোখ বুজে ভাবলাম, তারপর চমকে উঠলাম। আরে! আরে! এখানেই তো লেখকের সার্থকতা! লেখক তো পাঠককে এই ঘোরের মধ্যেই রাখতে চেয়েছেন! হ্যাঁ ঠিক তাই। এই যাবত লেখকের প্রকাশিত উপন্যাসের মধ্যে আমার কাছে দারুণ মনে হয়েছিল 'অন্দরমহল' এবং 'আরশিনগর'। কিন্তু এখন যুক্ত হলো 'অর্ধবৃত্ত'। অর্ধবৃত্ত নিয়ে ভালো লাগার একটি কারণ বলা উচিত। সেটি হল, লেখকের এই উপন্যাসে শুরু থেকেই একটা কাব্যিক ছন্দ আছে। উপন্যাসের প্রয়োজনে যুক্ত কবিতার কথা বলছি না। বলছি গল্পের শুরু থেকে শেষ দিকে আগানোর কথা। এক বাক্য থেকে অন্য বাক্যে লাফিয়ে লাফিয়ে না গিয়ে মন্থরে স্নিগ্ধ কদমে এগিয়ে যাওয়াত মোলায়েম ভালো লাগার কথাই বলছি। এটা সাধারণত একজন কবি ঔপন্যাসিক হয়ে উঠলেই হতে দেখা যায়। গল্প থেকে এইবার বেরিয়ে যাওয়া যাক। বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়ে বলা যাক, দুর্দান্ত। চারু পিন্টু দা'র গুরুত্বপূর্ণ আর দারুণ কাজের একটি হয়ে থাকলো অর্ধবৃত্ত উপন্যাসের প্রচ্ছদ। আর বইয়ের প্রোডাকশনের ক্ষেত্রে কোনো রকম গাফেলতি চোখে ধরা পরেনি সাধারণত ওমন মোটা পরিধির বই পড়তে পাঠকের যে সমস্যাটা হয় সেটা কমই হয়েছে। প্রশংসা পাবার যোগ্যতা রাখে 'অন্যধারা প্রকাশনা'। বইয়ের নামঃ অর্ধবৃত্ত লেখকঃ সাদাত হোসাইন (Sadat Hossain) ঘরনাঃ উপন্যাস প্রকাশনাঃ অন্যধারা প্রচ্ছদঃ চারু পিন্টু