আমার বিবেক আমার কথার বাধা হয়ে দাঁড়াত। বারবার মনে করিয়ে দিত, ‘তুই বেঁচেছিস সুরুজের মায়ের স্তন্যপান করে। সুরুজ তার খাবারের ভাগ দিয়ে তোকে বাঁচিয়েছে!’ আমি থেমে যেতাম। আমার গায়ের রক্ত যেন বরফগলা পানি হয়ে যেত। সুরুজও কি কম বিসর্জন দিয়েছে! এই পৃথিবীতে মায়ের ভাগই ক’জন দেয়?
আমি মেজো মামির কাছে চিরতরে ঋণী, তার চেয়ে বেশি ঋণী সুরুজের কাছে। কিন্তু বেড়ে ওঠার সাথে সাথে বড্ড নির্দয় হয়ে উঠেছে সুরুজ। কথার সদাই করে সে। নানাজান মারা গেছে তারই কথার প্যাঁচে পরে। সে নানাজানের খুনি। কথার ফাঁদে ফেলে কারো মৃত্যু ঘটালে সেটাও এক প্রকার খুন। সুরুজও খুনি। তার ফাঁসি হওয়া উচিত। কিন্তু ফাঁসি হবে না। সুরুজ কথা দিয়ে নানাজানের হৃদস্পন্দন বন্ধ করতে পেরেছে, এটার দৃশ্যমান কোনো প্রমাণ নেই। পুলিশ প্রমাণ ছাড়া কিছু করে না, তাই সুরুজের ফাঁসি হবে না।
তকিব তৌফিক
একজন লেখককে স্বপ্ন দেখতে জানতে হয়। তকিব তৌফিক নিজেই আস্ত একটা স্বপ্ন। এই ছেলের চোখ কথা বলে। সেখানে আছে গল্প নিয়ে পাগলামী। জীবনের মানে খুঁজতে বের হয়ে পড়া ছেলেটা তার লেখা গল্পে শব্দ, বাক্যে বুননের কারসাজি দেখিয়ে মুগ্ধ করেন পাঠকদের। গল্পের অলিগলিতে হাঁটতে হাঁটতে আমরা ভাবি। তকিব তৌফিকের গল্পগুলাে আমাদের জীবন নিয়ে ভাবাতে বাধ্য। করে। এপিলেপটিক হায়দার' দিয়ে এই লেখক যে যাত্রা। শুরু করেছেন বােঝা যায় তা থামার জন্য নয়। পাঠকরা। ভালােবেসে, ভালাে লাগার জায়গা থেকে লেখকের। লেখাগুলােকে হৃদয়ে ঠাই দিয়েছেন। ভালােবাসার কাঙাল লেখকের আর কী চাওয়ার আছে? চলতি পথে তকিব তৌফিকের পরবর্তী উপহার ‘অধ্যায়'। যে শ্রম নিঘুম রাত কাটানাে সংগ্রাম এই উপন্যাসের পেহনের আছে তা সফল হােক। একটা স্পষ্ট হৃদয়ের অভাবে অস্পষ্ট হয়ে আছে আমার এই মানুষ মন দিনের। পর দিন ভেবে ‘অধ্যায় উপন্যাসের জন্য লেখা এইসব লাইন টিকে থাকুক মানুষের মাঝে। পাঠক আগলে রাখুক যত্নে রাখুক অধ্যায়। তকিব তৌফিকের বড় শক্তি তার স্বপ্ন দেখার যােগ্যতা। লেখক পরিচয়ের পাশাপাশি তার ক্ষেত্রে আরও বেশি জরুরি হয়ে ওঠে ভালাে মানুষ হয়ে থাকা। ভালাে মানুষকে ভালােবাসতেই হয়। দারুণ করে হাসতে পারা ভকিব। তোফিকের জন্য ভালােবাসা রইলাে। শুভকামনা রইলাে। উপন্যাসটির জন্য। 'অধ্যায় আমাদের সকলের জীবনের নানান অধ্যায়ের ভেতরে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে। থাকুক আজীবন, থাকবে।
Title :
অর্বাচীনের উপাখ্যান ও অন্যান্য (হার্ডকভার)