বাঙালি মুসলমান লেখকদের নিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যায় থাকেন সম্পাদকরা। এমনি পাতায় লেখার জন্য লেখকদের অনুনয় বিনয় থাকলেও, সম্পাদক লেখা চাইলে সেই লেখকই লাপাত্তা। লেখকের লেখার হাত হারিয়ে যায় অজুহাতে। তবে কিছু লেখক সবকালেই থাকেন হয়তো যাদের কাছে মুখ কালো করে ফেরে না কেউ। না সম্পাদকরা, না পাঠকেরা। স্রষ্টা তার সর্বোচ্চ ঢেলে দেয়েছেন তাদের। এই সময়ের সেইসব হাতেগোনাদের একজনকে আমি জানি। নাম, কাসাফদ্দৌজা নোমান। কী লেখেন না নোমান? গদ্য, পদ্য, রম্য আথবা ফেসবুক স্ট্যাটাস। নোমান সবখানেই তার নামের ‘মান’টুকু রেখে চলেছে। অসম্ভর শক্তি আর পাঠক টেনে রাখার ক্ষমতা নিয়ে নোমানের বিচরণ। কনসেপ্ট, কনটেন্ট, আইডিয়া, বহুমাত্রিকতা, সাহিত্যবোধ আর প্রাসঙ্গিকতার অবাক মিশেল থাকে নোমানের লেখায়। বাঙালি মুসলমান লেখকদের মধ্যে আরেকটা ব্যতিক্রম নিয়ে এসেছেন কাসাফাদ্দৌজা নোমান। তার নাম। সহজ সরল লেখকের নামের সরিতে নোমান দাঁড়িয়েছেন একটা কঠিন নাম নিয়ে। কঠিনেরে ভালোবেসে নোমান পাঠকের জন্য লিখছেন সরলতম লেখা। সাবলীল লেখার পূর্ণপ্রয়োগ আছে নোমানের ‘অদ্ভুত তুমিহীনতায় ভুগছি’ বইতে। এই কথার সাথে দ্বিমত করার পাঠক হয়তো পাওয়া যাবে না বইটি পড়ার পর। আমি জানি না, নোমান কতটুকু যেতে চায়। তবে আমার বিশ্বাস স্রষ্টা নোমানকে লেখালেখির একটা ভিসাহীন পৃথিবী দিয়ে দিয়েছেন। এখন বাকিটা তার ইচ্ছা, সে কতটুকু যেতে চায়। ইশতিয়াক আহমেদ
কাসাফাদ্দৌজা নোমান
এলার্ম বাজলে উঠতে হবে এই শপথ করেই প্রতিরাতে ঘুমাতে যান এবং যথারীতি সকালে এলার্ম মিস করেন। তাই কাসাফাদ্দৌজা। নােমান-এর কাছে সকালে এলার্ম বাজতে থাকার মানে এই নয় যে, সঠিক সময়ে জাগতে হবে। তার কাছে এলার্মের মানে, দেরিটা যেন। আরাে বেশি দেরি না হয়ে যায়। সময় নিয়ে যার এমন লুকোচুরি, সময় তাকে নিয়ে কিছু দিন লুকোচুরি খেলে কিছু দিন তিনি সময়কে নিয়ে লুকোচুরি খেলেন। তাই হয়তাে তার বারের বইয়ের নাম সময় হলাে অসময়ে। এটি তার দ্বিতীয় উপন্যাস তৃতীয় বই। এর আগে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয় যথাক্রমে অদ্ভুত তুমিহীনতায় ভুগছি (গল্প সংকলন) এবং জীবন বৃত্তান্তে নেই (প্রথম উপন্যাস)।
লেখালেখির শুরু ফাকিবাজি আর অপ্রয়ােজনীয়তা থেকে। পড়াশােনায় ফাকি দিয়ে যেই অপ্রয়ােজনীয় কাজটি করতেন সেটি অযথা লেখালেখি। আর এভাবেই জগতের যাবতীয় অযথা কাজের মাঝে নিজের মেধার পরিচয় দিয়ে জাতীয় দৈনিকের ক্রোড়পত্রে রম্য লেখার মাধ্যমে লেখালেখির শুরু। কর্মজীবনে তিনি সকালে যথাসম্ভব দেরি করে বাস ধরেন এবং এলার্ম-বিলম্বিত ঘুমটুকু পুষিয়ে অফিসে যান। আবার রাতে ফিরতি বাসে বাড়ি ফেরেন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে। মাঝের সময়টুকুতে পার করে দেন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় পণ্যের গুণগান করতে করতে।
কাসাফাদ্দৌজা নােমান এর জন্ম ১৯৮৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি, চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই থানার পশ্চিম খৈয়াছড়া গ্রামে। কৈশাের থেকে যৌবন, বন্দরনগরী থেকে রাজধানী।