ঘরের উঠতি বয়সের কিশোরীটি কি সত্যিই নিরাপদ জীবন যাপন করছে? কী? ঝাঁকুনি খেলেন? নাকি ধন্দে পড়ে গেলেন? কই? নিরাপত্তার তো অভাব নেই। যাবার মধ্যে স্কুল-প্রাইভেট আর ফেরার মধ্যে বাসা। আমরা তো রয়েছি। ওর জীবনও তো ঠিকঠাক চলছে। রুখসানার এই কাহিনিটি শুধু ‘নরকযাত্রা’ উপন্যাসেই সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের চারপাশের সকলেই সম্ভাবনাময় ‘রুখসানা’। ‘নরকযাত্রা’ তাই জীবনঘনিষ্ঠ কাহিনি। নাসিরদের অদ্ভুত তৃষ্ণার নিবারক হয়ে দাঁড়ানো অসহায় রুখসানারা আমাদের সংসারেই নিজেদের ভেতর গুমরে মরে। কখনও প্রেমে, কখনও বিরহে। কখনওবা এই দুইয়ের ভেতরের সিদ্ধান্তহীনতায়। আবার কখনওবা অপমানে-যন্ত্রণায়। ‘নরকযাত্রা’-এর চরিত্ররা আমাদের চেনা চরিত্র। জীবনের ফুটপাতে যাদের সঙ্গে দেখা হয় সময়ে অসময়ে, ‘নরকযাত্রা’ তাদেরই আয়না। সে আয়নার মাঝ বরাবর একটা সূক্ষ্ম ফাটল। ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যায়— ফাটলটার একপাশে লোলুপ হায়েনার ক্রূরহাসি, অন্যপাশে কুঁকড়ে থাকা শিকার। কাম ও লোভের এই যাত্রার শেষ পরিণতি দাঁড় করাবে কোন নরকে?
মৌলী আখন্দ
পৃথিবীতে কিছু মানুষ বুকের গহিনে বয়ে বেড়ায় এক সমুদ্র কথা কিন্তু সামনে থাকা মানুষটিকে বলবার মতো কিছু খুঁজে না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটায় নির্বাক নিশ্চুপ। মৌলী আখন্দ সেইসব অসামাজিক নিভৃতচারী মানুষদের মধ্যে একজন। তাঁর জন্ম ১৯৮৬ সালে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বেড়ে ওঠা ও বসবাস ঢাকায় । এক কন্যার জননী। পড়াশোনা হলিক্রস স্কুল ও কলেজে। পেশায় তিনি একজন চিকিৎসক। শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল থেকে এম বি বি এস পাস করে মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ে মাস্টার্স করেছেন। বর্তমানে শিশু মেডিসিন বিষয়ে কর্মরত । নেশা বই পড়া, উঁইপোকার মতো পুরির ঠোঙা থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত সবই পড়তে ভালোবাসেন। স্বপ্ন দেখেন বৈষম্যমুক্ত পৃথিবীর, যেখানে নারী পুরুষ ধনী গরিব সবাই পাবে সমান সুযোগ ও অধিকার। লেখকের এ পর্যন্ত প্রকাশিত বই “একা”, “ইট রঙের বাড়ি”, “যে জীবন দোয়েলের”, “এখানে রোদ নেই”, “আলোকের এই ঝরনাধারায়”, “সর্পিল”, “আমাদের মেঘবাড়ি”, “নির্মোক”, “স্বপ্নচূড়া” ও “শঙ্কিত শর্বর”। তাঁর সম্পাদিত গল্প সংকলন “শূন্যপুর” বোদ্ধা মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। প্রথম প্রকাশিত বই “একা”র জন্য অর্জন করেছেন পাললিক সৌরভ তরুণ লেখক সম্মাননা ২০২১ এবং “এখানে রোদ নেই” বইটির জন্য ভূষিত হয়েছেন ২০২১ চলন্তিকা সাহিত্য প্রতিযোগিতায় সেরা উপন্যাসের পুরস্কারে।
মৌলী বিশ্বাস করেন গল্প হলো জীবনের আয়না । সেই আয়নায় জীবনের স্পষ্ট ছবি তুলে ধরতে প্রতিদিন আয়নাটা মুছে পরিষ্কার করেন তিনি। তাই লিখে যান অবিরাম ।