এক কুৎসিত চেহারার মানুষকে এক বিদুষী নারী বলেছিল-
‘আপনি হলেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষ।‘
এই একটি বাক্যেই বদলে গেছে তার জীবন। সে ছিল এমন পুরুষ যার সৌন্দর্য দেখার জন্য থাকতে হয় অন্তরের চোখ। একমাত্র সে নারীরই ছিল সেই চোখ। তারপর, জমিদারের বিলাসী জীবন থেকে সে লোকটি নেমে এসেছিল সাধারন মানুষের কাতারে। ভালোবাসা তাকে দিয়েছিল বিদ্রোহের শক্তি।
এটা সেই সময়ের ঘটনা-
যখন পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ উদ দৌলা পরাজিত হয়েছেন, আর সুবে বাংলা ও বিহার দখল করে নিয়েছে ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ইতিহাসে এই অংশটুকু লেখা হয় অনেক বড় করে। কিন্তু যে অংশটার কথা সবাই বিস্মৃত সেটা হল- পলাশী পরবর্তী তিন দশক নবাবের চাকরীচ্যুত সৈন্য, সাধারন কৃষক, মুসলিম সাধক ও হিন্দু সন্ন্যাসীদের প্রায় ৫০হাজার সদস্যকে সংগঠিত করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন এক মহান সুফি সাধক, তাঁর নাম- ফকির মজনু শাহ্।
শেষ যুদ্ধে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন, কিন্তু উত্তরপুরুষের জন্য রেখে গেছেন ইনসাফের পক্ষে জালিমের বিরুদ্ধে যুদ্ধের এক অভূতপূর্ব সাহসের উদাহরণ।
"নূর"
লতিফুল ইসলাম শিবলী
'৮০ আর '৯০ দশক জুড়ে একদল খ্যাপাটে তরুণ বাংলা গান দিয়ে একটা সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছিল, লতিফুল ইসলাম শিবলী তাদের একজন।
প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের আগেই তার কবিতাগুলাে হয়েছিল গানে গানে জনপ্রিয়-জেল থেকে বলছি, তুমি আমার প্রথম সকাল, আমি কষ্ট পেতে ভালবাসি, কেউ সুখি নয়, হাসতে দেখাে গাইতে দেখাে, হাজার বর্ষারাত, পলাশীর প্রান্তর, প্রিয় আকাশী...৯০ দশক জুড়ে লিখেছেন এমন তিন চারশাে গান। পুরাে একটা জেনারেশনের দৈনন্দিন দুঃখ সুখের ডাইরি হয়ে আছে শিবলীর গান। আধুনিক তারুণ্যের ভাষাকে তিনি তার গীতিকবিতায় এঁকেছেন অত্যন্ত সহজসরল রক’ এর ভাষায়। তাই অল্প সময়ের মধ্যেই শিবলী পরিণত হয়েছেন এদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের কিংবদন্তি গীতিকবিতে।
শুরুটা হয়েছিল গ্রুপথিয়েটার নাট্যচক্রে, তারপর শিল্পের অন্যান্য মাধ্যমে। কমপ্লিট ম্যান' খ্যাত সেঞ্চুরি ফেব্রিকসের দুর্দান্ত সেই ঝুঁটিবাধা মডেল শিবলী ছিলেন তার সময়ের ফ্যাশন আইকন সফল নাট্যকার। বিটিভির যুগে তার লেখা প্রথম সাড়া জাগানাে নাটক ‘তােমার চোখে দেখি’ আর রাজকুমারী। রাজকুমারী’তে মির্জা গালিব চরিত্রে তাঁর অনবদ্য অভিনয় এখনও অনেকের মনে থাকার কথা।
শিবলীর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ- ‘ইচ্ছে হলে ছুঁতে পারি তােমার অভিমান’ (১৯৯৫) দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ‘তুমি আমার কষ্টগুলাে সবুজ করে দাও না’ (২০১০) তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ- 'মাথার উপরে যে শূন্যতা তার নাম আকাশ, বুকের ভেতর যে শূন্যতা তার নাম দীর্ঘশ্বাস' (২০১৪) বাংলা একাডেমী থেকে প্রথম প্রকাশিত হওয়া এই প্রবন্ধগ্রন্থটি ব্যান্ড সংগীতের ওপর লিখিত প্রথম এবং একমাত্র গবেষণাধর্মী প্রবন্ধগ্রন্থ। নিজের লেখা সুর ও কম্পােজিশনে এবং নিজের কণ্ঠে গাওয়া তার প্রথম অ্যালবাম- “নিয়ম ভাঙার নিয়ম (১৯৯৮)
শিবলী’র কাহিনী সংলাপ এবং চিত্রনাট্যে প্রথম পূর্ণদৈঘ্য চলচ্চিত্র ‘পদ্মপাতার জল' (২০১৫) প্রথম বেস্টসেলার উপন্যাস ‘দারবিশ’ (২০১৭), দ্বিতীয় উপন্যাস দখল’ (২০১৮)। স্বভাবজাত বােহেমিয়ান, ঘুরেছেন ইউরােপের পথে-প্রান্তরে। প্রিয় বিষয় কম্পারেটিভ আইডিওলজি অ্যান্ড রিলিজিয়ন স্টাডিজ, পলিটিক্স, হিস্ট্রি, এনভায়রনমেন্ট, পেইন্টিংস একাডেমিক শিক্ষায় তিনি মাস্টার্স। জন্ম ১৪ এপ্রিল, পহেলা বৈশাখের সুবেহ সাদিকের সময়। নব্বই দশকের স্বৈরশাসনবিরােধী আন্দোলনের ভেতর দিয়েই তার বেড়ে ওঠা। শৈশব-কৈশাের আর তারুণ্যের শহর নাটোর, যৌবনের শহর ঢাকা ও লন্ডন। ওমর এবং ওসমান নামের দুই সন্তানের বাবা তিনি।