নবনী (হার্ডকভার)
কভারটা দেখে রীতিমত অবাক হলাম! হুমায়ূন আহমেদের প্রেমের উপন্যাস 'নবনী'!! এমন লাগলো যেন মফস্বলের কোনো নাম না জানা লেখকের প্রথম উপন্যাস।এবং বিক্রয়ের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করা।কোন লেখকের প্রথম বইয়ের বিজ্ঞাপন এমন হওয়াটা স্বাভাবিক। হুমায়ূন আহমেদ তো প্রেমহীন কোনো উপন্যাস লেখেননি! লেখার প্রতি তার চিরকালের প্রেম!মোটাদাগে প্রেমের উপন্যাস বলার কারন কি?একবার,দুইবার,তিনবার, সর্বমোট এগারবার পড়লাম।কোন বই পড়লে বিশ্লেষণ! করাটা আমার অভ্যাসের কাছাকাছি। নবনী একটা সত্য উপন্যাস।হিমুর মতো কল্পিত কিছু নেই এতে।হাজারো নারীর এক অপরূপ আখ্যান এতে।জাদুকরী লেখা নিয়ে কিছু বলার নেই।স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাঙলা সাহিত্যে প্রবাদপুরুষ হুমায়ূন আহমেদ।লেখক উপন্যাসটি শুরু করেছেন নাটকীয়তা দিয়ে।কোন মেয়েকে যদি ঘুম থেকে তুলে বলা হয়, খুকি তোমার বিয়ে!তখন খুকির মনের অবস্থা কি হবে সেটা অকল্পনীয়।আমাদের সময়ে কোন খুকিকে এধরনের কথা বললে সে নিশ্চিত অবাক হওয়ার বদলে কান্না করবে।এবং এটা বললেও অবাক হব না ,আমার জন্য অমুক রোমিও অপেক্ষা করছে।অথবা বাঙলা চলচ্চিত্রের ডায়লগ দিয়ে বলতে পারে, বাবা এ বিয়ে আমি করতে পারব না।তখন বাবা বলবেন,আমার মুখের ওপর কথা! কিন্তু নবনী উপন্যাসে এধরনের কিছু ঘটেনি।উপন্যাসটিতে উঠে এসেছে বাস্তবতা।নবনী নামের একটি মেয়ের জীবনে যে বিষাদময় ঘটনা ঘটেছে তার একটা ক্ষুদ্র বিশ্লেষণ এই উপন্যাসটি।উপন্যাসটি শুরু হয়েছে এভাবে-দুপুরবেলা মায়ের ডাকে নবনীর ঘুম ভাঙ্গে।ঘুম ভাঙ্গার পর সে জানতে পারে আজ তার বিয়ে। হুট করে কেউ যদি জানে আজ তার বিয়ে তাহলে বিচলিত হওয়ার কথা। কিন্তু নবনী হচ্ছেনা। আসলে তার কোনও রকম অনুভূতিই হচ্ছেনা। নবনীর বিয়েটা হয় মামার ইচ্ছাতেই।নবনীর পরিবারের জন্য মামা অতিগুরুত্বপূর্ণ একজন।কিছু মানুষ জন্ম নেয় দায়িত্ব পালন করার জন্য।নবনীর মামা সেধরনের মানুষ।এই মানুষটি নবনীদেরকে প্রচন্ডরকমের ভালবাসেন।নবনীরা যেদিন জানতে পারে বিয়ে,সেদিনই নবনীর বিয়ে হয়ে যায়।বিয়ের পরদিন নবনী স্বামীর সাথে ঢাকায় চলে আসে।নবনীর স্বামী নোমান খুবই ভালো, সহজ, সরল একজন মানুষ।এই মানুষটার প্রথম প্রেমই তারস্ত্রী নবনী। স্ত্রীর প্রতি তার ভালোবাসা দৃশ্যমান।ঢাকায় এসে নবনীর পরিচয় হয় বিরাট ধনবান সফিক ও তার স্ত্রী অহনার সাথে।উপন্যাসে অহনার চরিত্রটি জটিলতায় পরিপূর্ণ।উপন্যাসটিতে আমরা জানতে পারব আহনার প্রকৃত নাম জাহেদা।এই উপন্যাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলো নবনীর ইতিহাসের টিচার। তিনি ছোটবেলায় এতিমখানায় মানুষ হয়েছেন। আলীগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যিনি এম,এ করেন।এই মানুষটিই নবনীর প্রথম ভাললাগা,প্রথম প্রেম।যে কিনা নবনীদের বাড়িতে ভাড়া থাকত।এই মানুষটির মৃত্যুতে নবনী ভেঙে পড়ে।তারপর বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে উপন্যাসটি এগিয়ে চলে।উপন্যাসের প্রধান চরিত্র নবনী।এছাড়াও নবনীর বোন ইরা,ভাই অন্তু অপ্রধান চরিত্র হিসেবে উপন্যাসটিতে ফুটে উঠবে।নবনী হুমায়ূন আহমেদের একটি অতি চমৎকার রোমান্টিক উপন্যাস। আমার দৃষ্টিতে তাঁর লেখা অন্যতম সেরা রোমান্টিক উপন্যাস এটি।পাঠক এটি পড়লে একই সাথে বিষাদ ও প্রেমের জবানিকা টানতে পারবেন বলে বিশ্বাস। #বইবাজার_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_মার্চ_২০১৯