হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমাদের প্রিয়নবি। সাইয়িদুল মুরসালিন। বিশ্ববাসীর জন্য যিনি আদর্শ। আল্লাহ যাঁর ব্যাপারে বলেছেন; হে নবি, আপনি হলেন বিশ্ববাসীর জন্য উত্তম আদর্শ।
রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের প্রতিটি পদে পদে আমাদের জন্য কি নেই। ঘর-সংসার, রাজা-গোলাম, ইবাদত-বন্দেগিসহ জীবনের প্রতিটি পর্বে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতের জন্য রেখে গেছেন উত্তম আদর্শের নমুনা—তাঁর নিজ আমলের মাধ্যমে।
সাইয়িদ আবুল হাসান আলি নদবি রাহিমাহুল্লাহ ও ড. রাগিব সারজানি এ বিষয়ে নিজ নিজ গ্রন্থে সে বিষয়টি তুলে ধরেছেন। লেখক খুবই সুন্দরভাবে দেখিয়েছেন; নবিজি সাংসারিক জীবনে কেমন ছিলেন; নবিজির দয়া-মহানুভবতা কেমন ছিল। নবিজির ইবাদত; অনুগ্রহ; নামাজ-রোজাসহ জীবনের নানা অধ্যায়ে রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কী কী আদর্শ আছে এবং তা বাস্তবায়নের সঠিক পদ্ধতি লেখক এ গ্রন্থে তুলে ধরেছেন। আশা করি বইটি আমাদের জন্য উত্তম পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে। ইনশাআল্লাহ।
সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.
আল্লাহর পথের এক মহান দাঈ, ইলমে ওহীর বাতিঘর। যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী। খাঁটি আরব রক্তের গর্বিত বাহক। বিশ্বময় হেদায়াতের রােশনি বিকিরণকারী। উম্মতের রাহবার ও মুরব্বি। কল্যাণের পথে আহ্বানে চিরজাগ্রত কর্মবীর।
জন্ম ১৯১৪ ঈসাব্দে। ভারতের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সূতিকাগার উত্তর প্রদেশের রাজধানী লাখনৌর রায়বেরেলীতে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আদ্যোপান্তই দারুল উলুম নদওয়াতুল ওলামায়। অধ্যাপনা জীবনের সিংহভাগও এই প্রতিষ্ঠানেই নিবেদিত ছিল। । আল্লামা নদভীর খ্যাতির সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে; সীরাতে সাইয়েদ আহমাদ শহীদ রচনার মাধ্যমে। গ্রন্থটি গােটা ভারতবর্ষে তাঁকে পরিচিত করে তােলে। এরপর তিনি রচনা করেন মা যা খাসিরাল আলাম বিনহিতাতিল মুসলিমীন নামক কালজয়ী গ্রন্থ। যা তাকে প্রথমত আরববিশ্বে ও পরবর্তীতে বৈশ্বিক সুখ্যাতি এনে দেয়। এ পর্যন্ত গ্রন্থটির শত শত সংস্করণ বেরিয়েছে।
বিগত প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ধরে তাঁর কলম অবিশ্রান্তভাবে লিখেছে মুসলিম ইতিহাসের গৌরবদীপ্ত অধ্যায়গুলোর ইতিবৃত্ত। সীরাত থেকে ইতিহাস, ইতিহাস থেকে দর্শন ও সাহিত্য পর্যন্ত সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ । উর্দ থেকে তার আরবী রচনাই যেন অধিকতর অনবদ্য। আল্লামা নদভী জীবনে যেমন পরিশ্রম করেছেন, তেমনই তার স্বীকৃতিও পেয়েছেন। আন্তর্জাতিক বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সদস্য ছিলেন। তিনি একাধারে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, লখনৌর বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম নাদওয়াতুল-উলামা-এর রেকটর এবং ভারতীয় মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম মুসলিম পার্সোন্যাল ল বাের্ডের সভাপতি ছিলেন।
ইসলামের এই মহান সংস্কারক ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর জুমার আগে সুরা ইয়াসীন তিলাওয়াতরত অবস্থায় ইনতিকাল করেন। সাত খণ্ডে রচিত তারিখে দাওয়াত ও আযীমত তার। আরেকটি কালজয়ী রচনা যার অনবদ্য অনুবাদ সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস। বাংলাভাষী পাঠকদের হাতে বইটির সার্থক অনুবাদ তুলে। দিতে পেরে আমরা আল্লাহর শােকরিয়া আদায় করছি।
ড. রাগিব সারজানি
Dr. Rageb Sarjani জন্ম: ১৯৬৪ঈ. আল মুহাল্লা কুবরা, মিশর। ড. রাগেব সারজানী মিশরের বিশিষ্ট ইসলামপ্রচারক, ইতিহাসবিদ ও একজন আধুনিক আরবলেখক। পেশায় মূলত তিনি একজন ডাক্তার। তবে ডাক্তারি পেশার পাশাপাশি ইসলামী ইতিহাসের গভীর গবেষণা বর্তমান পৃথিবীতে তাকে একজন বিশিষ্ট ইসলামী ইতিহাসবিদ হিসেবে পরিচিত করেছে। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর পবিত্র কুরআনুল করীম হিফজ করেন। ইসলামের প্রতি আস্থা ও ভালোবাসা, ইসলামের ইতিহাসের প্রতি দরদ ও শ্রদ্ধা-তার চোখের তারায় যে আগামীর স্বপ্ন আঁকে-সেই স্বপ্ন বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতেই তার লেখালেখি। এই স্বপ্ন ছবি হয়ে উড়ে বেড়ায় তার রচনার ছত্ৰে ছত্ৰে | শিক্ষা তিনি ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদ থেকে ইউরোসার্জারি বিষয়ে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র কুরআনুল করীম হিফজ করেন। কর্মক্ষেত্র অধ্যাপক : মেডিসিন অনুষদ, কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়,সদস্য : ইন্টারন্যাশনাল মুসলিম উলামা পরিষদ,সদস্য : মানবাধিকার শরীয়া বোর্ড, মিশর,সদস্য : আমেরিকান ট্রাস্ট সোসাইটি ,প্রধান : ইতিহাস বিভাগ, ইদারাতুল মারকাযিল হাজারা, মিশর রচনাবলি ইতিহাস ও ইসলামী গবেষণা বিষয়ে এ পর্যন্ত তার ৫৬টি মূল্যবান গ্ৰন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য— কিসসাতুত তাতার (তাতারীদের ইতিহাস),কিসসাতু উন্দুলুস (স্পেনের ইতিহাস),কিসসাতু তিউনুস (তিউনেসিয়ার ইতিহাস) আর রহমা ফি হায়াতির রসূল মা'আন নাবনী খায়রা উন্মাতিন প্রভৃতি।