আমার বিশ্বাস সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যে বুলবুল চৌধুরীকে জোনাকি কিংবা বহমান নদীর প্রতীক হিসেবে ভাবা যেতে পারে। কারণ, ঘোর অন্ধকারে তিনি মুক্তোর দ্যুতি ছড়ান এবং যাবতীয় উদ্ভিদের গোড়া সিক্ত করেন।
গল্পটা কি তা বলতে যাওয়া এই অর্থে নিরর্থক যে, বুলবুল চৌধুরীর সমস্ত লেখার প্রতিটি প্যারা, এমনকি অনেক সময় প্রতিটি বাক্যও এক একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ গল্প হয়ে ওঠে। চোখ কান খোলা রাখলে তাঁর গল্প কিংবা উপন্যাসে আপনি মহাকাব্যের উপাদানও খুঁজে পেতে পারেন। তাঁর লেখা পড়ার একটাই মাত্র শর্ত, মন দিয়ে না পড়লে, দুঃখিত , আপনি তাঁর পাঠক হতে পারছেন না। তাঁর পুঁজি বিচিত্র অথচ বাস্তব সব চরিত্র, সেগুলোর সমৃদ্ধ করবেন। নিজেকে এরচেয়ে বড় পুরস্কার একজন পাঠকের আর কি দেওয়ার থাকতে পারে। ‘মরম বাখানি’র সূচনাতেই রোমহর্ষক রোমাঞ্চ। শুরুতে খুনি খুন করেছে, শেষে খুনি খুন হয়েছে। মাঝখানে উত্তাল তরঙ্গমালার মতো প্রচণ্ড আক্রোশে ফুঁসে উঠতে চাইছে জুট মিলের সব শ্রমিক । খুদু মোল্লাই হয়তো এই কাজের কাজী। কিন্তু কার এত সাহস যে, তার নাম মুখে আনে! মূল কাহিনীর গতিপথ যেমন বিস্ময়কর তেমনি বিচিত্র। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা না থাকলে এই বুনন কখনও সম্ভব নয়।
বুলবুল চৌধুরী
বুলবুল চৌধুরী (জন্ম: জানুয়ারি ১, ১৯১৯ - মৃত্যু: মে ১৭, ১৯৫৪) প্রখ্যাত বাঙালি নৃত্যশিল্পী। পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়ার চুনতি গ্রামে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তাঁর সমান খ্যাতি ছিল। তার নাম অনুসারে বুলবুল ললিতকলা একাডেমী নামে বাংলাদেশের স্বনামধন্য সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র রয়েছে। পিতৃপ্রদত্ত নাম ছিলো রশিদ আহমদ চৌধুরী। নৃত্যশিল্পের বাইরে তিনি লেখক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ১৯৪২ সালে তার উপন্যাস 'প্রাচী' প্রকাশিত হয়। বুলবুলের লেখা ছোটগল্প 'অনির্বাণ' রুশ ভাষায় অনূদিত হয়েছিল। তার অন্যান্য লেখার মধ্যে ছিলো - আরাকান ট্রাংক রোড, পাদপ্রদীপ।