বাংলাদেশে ছোটগল্পের ঐতিহ্যটি পুরোনো আবার নতুনও। পুরোনো, যদি আমরা গল্প বলার গ্রামীণ ঐতিহ্যকে স্মরণ করি, যা এই শতাব্দীতে এসে প্রায় হারিয়েই গেছে। আর নতুন, যদি মুদ্রিত সাহিত্যের উনিশ শতকের শুরু থেকে এ পর্যন্ত চলে আসা চর্চাকে মনে রাখি। বাংলাদেশে এই নতুন চর্চাটি অত্যন্ত বেগবান। যদি প্রতিবছর প্রকাশিত ছোটগল্পের বইয়ের সংখ্যাকে বিবেচনায় এনে এই চর্চার একটা খতিয়ান নেওয়া যায়, তাহলে এটি যে বেগবান, সে বিষয়ে কারও সন্দেহ থাকবে না। তবে সংখ্যা দিয়ে ছোটগল্পের ভালোমন্দ বিচার হয় না। এই কথাটি মনে রেখে যদি বাংলাদেশে ছোটগল্প কতখানি শিল্পোত্তীর্ণ হচ্ছে এই প্রশ্নটি করা যায়, তাহলেও উত্তরটি হবে ইতিবাচক। উচ্চমানের অনেক ছোটগল্প লেখা হচ্ছে, প্রকাশিত হচ্ছে। এই তালিকায় প্রবীণ থেকে নিয়ে নবীন কথাসাহিত্যিকদের অবদান আছে। অনেক ছোটগল্পে শৈলী আর বর্ণনাকৌশলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ছাপ রয়েছে, অন্য অনেক ছোটগল্পে বর্ণনার গুরুত্বটাই প্রধান- অর্থাৎ গল্পের কলকজা নিয়ে নিরীক্ষাধর্মিতার পরিবর্তে এটি কত মনোগ্রাহী করে বলা যায়, এবং একই সঙ্গে, ছোটগল্পের দাবিগুলো মেটানো যায়, সে বিষয়টিই প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। এই শেষোক্ত ধারায় গল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেছেন মাজহারুল ইসলাম,
যার প্রকাশক পরিচিতি তার লেখক পরিচিতিকে কিছুটা হলেও আড়াল করেছে। কিন্তু তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ঘটনা কিংবা দূর্ঘটনার গল্প-এ-যা প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৯ সালে মাজহার যে পরিপক্বতা দেখান এবং ছোটগল্প লেখার কলাকৌশলগুলো যে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেন, তাতে তার লেখক পরিচিতিটাই প্রধান হওয়ার কথা ছিল। এটি হয় নি হয়তো এজন্য যে প্রকাশক হিসেবে তিনি নিজেকে উপস্থাপন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু তার অন্যান্য ছোটগল্প সংকলনের সঙ্গে এই শেষতম সংকলনটি, নির্বাচিত গল্প, হয়তো এই পরিচয়-দ্বিত্বতার সমাপ্তি ঘটাবে। এই বইয়ের পাণ্ডুলিপিটি পড়ে আমার মনে