ডক্টর হুমায়ুন আজাদ বিপুল সংখ্যক শব্দ ও বাক্য, গত দুদশকে, বিন্যাস করেছেন বিভিন্ন আঙ্গিকে; কবিতা, গবেষণা, সমালােচনা, ভাষাবিজ্ঞান, উপন্যাস, কিশােরসাহিত্য, এবং প্রবন্ধে। কবিতার দিকে চোখ রেখে তিনি বেরিয়েছিলেন তরুণ বয়সে, বাঙলা ভাষাকে করে নিয়েছিলেন দ্বিতীয় ও অদ্বিতীয় স্বদেশ, তবে গদ্যের ঢেউই উঠেছে বেশি তাঁর জগতে। স্বপ্ন কল্পনা সৌন্দর্য কামনায় যেমন আলােড়িত তিনি, তেমনি আনন্দ পান মননশীলতায়; এর ফলই কবিতা, উপন্যাস, ও প্রবন্ধ। তিনি প্রথাগত নন কোনাে এলাকায়; তার সব ধরনের লেখায়, এবং প্রবন্ধে, এর পরিচয় রয়েছে। সাহিত্য, বিশেষ করে কবিতা, নিয়ে লিখতেই তিনি সুখ পান; কিন্তু তিনি শুধু কবিতা নিয়ে লেখেন নি; ভাষা, বিশ্বাস, মানুষের অবস্থা, রাজনীতি প্রভৃতি নিয়েই লিখেছেন বেশি; এবং ভাষা তাঁর কাছে এক শিল্পকলা। হুমায়ুন আজাদের নির্বাচিত প্রবন্ধ বাঙলাদেশের একজন প্রধান মননশীল ও সৃষ্টিশীল লেখকের প্রবন্ধসগ্রহ, যাতে এসময়ের শ্রেষ্ঠ চিন্তা ও সৃষ্টিশীলতার পরিচয় সংকলিত হলাে। হুমায়ুন আজাদ বলেছেন, ‘এ-বই হয়তাে অনেকের প্রিয় ও সঙ্গী হবে; অনেকের হবে না। কিন্তু সন্দেহ নেই এ-বই প্রিয় ও সঙ্গী হবে বর্তমান ও ভবিষ্যতের অসংখ্য মেধাবী চিত্তের।
হুমায়ুন আজাদ
হুমায়ুন আজাদ (২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ - ১১ আগস্ট ২০০৪; ১৪ বৈশাখ ১৩৫৪ - ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, সমালোচক, গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী, কিশোর সাহিত্যিক এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকার। তিনি বাংলাদেশের প্রধান প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক যিনি ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান- ও সংস্কারবিরোধিতা, নিরাবরণ যৌনতা, নারীবাদ ও রাজনীতি বিষয়ে নির্মম সমালোচনামূলক বক্তব্যের জন্য ১৯৮০-র দশক থেকে ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের উপর কাজ করার জন্য জার্মান সরকারের নিকট একটি বৃত্তির আবেদন করেছিলেন। ২০০৪-এর ৭ আগস্ট জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান।
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ আগস্ট রাতে একটি পার্টি থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আবাসস্থলে আকস্মিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হুমায়ুন আজাদ। ১২ আগস্ট ফ্ল্যাটের নিজ কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।