বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসে ‘মোস্লেম ভারত’ (১৯২০) গুরুত্বপূর্ণ নাম। কারণ এই সাময়িকপত্রে হিন্দু-মুসলিম লেখকগণ প্রায় সমভাবে লেখনী ধারণ করেন। এর আগে বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসে এই দৃষ্টান্তটি ছিল না; ‘মোস্লেম ভারত’ প্রথম স্থাপন করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই সাময়িকপত্রের জন্য আশীর্বাণী প্রদান করেছিলেনÑ তাঁর লেখাও মুদ্রিত হয় এখানে; ঠাকুর বাড়ির আরো কয়েকজন লেখেন। সব মিলিয়ে সতেরটি সংখ্যা প্রকাশ পেয়েছে ‘মোস্লেম ভারতে’র। অন্যান্য সাময়িক পত্রিকার তুলনায় নিতান্তই স্বল্পায়ু ছিল পত্রিকাটি। ঐতিহাসিক অবদানের দিক থেকে এই অল্প সময়ের জীবনকে অক্ষয় করে রেখেছে ‘মোস্লেম ভারত’। কাজী নজরুল ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রচনাবলি, কাজী ইমদাদুল হকের উপন্যাস ‘আবদুল্লাহ’ ধারাবাহিকভাবে প্রথম প্রকাশ পায় এই পত্রিকায়। কায়কোবাদ রচিত বিখ্যাত ‘আজান’ কবিতাও প্রথম ছাপা হয় এখানে। নিয়মিত-অনিয়মিত লেখকের তালিকায় যাঁরা ছিলেন, তাঁরা হলেন : সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, মোহিতলাল মজুমদার, কায়কোবাদ, কাজী ইমদাদুল হক, কুমুদরঞ্জন মল্লিক, মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ, শাহাদাৎ হোসেন, গোলাম মোস্তফা, চণ্ডীচরণ মিত্র, শেখ ফজলল করিম, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, কালিদাস রায়, অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, কাজী আবদুল ওদুদ, বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, মুজফ্ফর আহ্মদ প্রমুখ। আধুনিক মুসলিম লেখকদের গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সাময়িকপত্রটির অবদান অনস্বীকার্য। এই গ্রন্থে ‘মোস্লেম ভারতে’র সতেরটি সংখ্যা থেকেই তুলনামূলকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রচনা সংকলন করা হয়েছে।