ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ খালিদের কথাটা শুনে ওর চেহারার দিকে ভালো করে তাকাল নিনি। বিশ্বাস হচ্ছে না কথাটা। কোনো ভাবনাও আসছে না মাথায়। কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগছে সব। ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে চারপাশ। নিজেকে প্রচণ্ড অসহায় মনে হচ্ছে এ মুহূর্তে, অপাঙক্তেয়। বুকের ভেতর কোথায় যেন ভারী হয়ে গেল বেশ। খালিদের দিকে একটা হাত বাড়িয়ে দিয়েই সেটা ফিরিয়ে নিয়ে বলল, ‘তুমি ঠিক শুনেছ তো খালিদ“’
নিনির ফিরিয়ে নেওয়া হাতের দিকে হাত বাড়াল খালিদ। আলতো করে সেটার ওপর নিজের হাতটা রেখে বলল, ‘আমার বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে কম কথা বলে রাহাদ এবং যা বলে সত্য বলে। কথাটা ওই আমাকে বলেছে।’
‘জোক করে নি তো রাহাদ!’
‘ও জোক করার মতো ছেলে না, নিনি।’ খালিদ নিনির দিকে একটু ঝুঁকে বলে বলল, ‘অন্তত এসব ক্ষেত্রে তো নয়ই।’
‘আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না, খালিদ।’ কেমন অসহায়ের মতো শোনাল নিনির গলা।
‘আমা্রও বিশ্বাস হয় নি। কিন্তু -।’ থেমে গেল খালিদ।
সুমন্ত আসলাম
আজন্ম লালিত স্বপ্নকে যে সার্থক করে তুলতে পারে, সে-ই সত্যিকারের ভাগ্যবান। আমরা বন্ধুরা তাই সুমন্তকে সেসব হাতে গােনা ভাগ্যবানদের একজন বলে মানি, গর্বিত হই সুমন্তকে নিয়ে; হিংসায়ও পুড়ি কখনাে কখনাে । কারণ একটাই—লেখালেখির স্বপ্নটাকে বিফলে যেতে দেয়নি সুমন্ত আসলাম । বরং শখের লেখালেখির সঙ্গে সখ্য গড়ে সে এখন আদ্যোপান্ত একজন পাঠকপ্রিয় লেখক । ২০০১ সালে ‘স্বপ্নবেড়ি’তে গল্প লেখায় যে মেধার স্বাক্ষর সে রেখেছিল, তা উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সমানভাবে । বন্ধু বলে সমালােচনার কাচি-ছুরির হাত থেকে রেহাই মেলে না। লেখক সুমন্তর কিন্তু সব কিছুর শেষে প্রতিবারই হার মানতে হয়। আমাদের, মুগ্ধ হতে হয় তার লেখায় । অপেক্ষায় থাকতে হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত গল্পের, কিংবা অন্য কোনাে লেখার। কিংবা আসন্ন বইমেলার—কখন প্রকাশিত হবে সুমন্তর নতুন বই। দৃপ্ত সাহসী ভঙ্গি, চিবুকের সজীব ঔদ্ধত্য দেখে কেউ কেউ অহঙ্কারী বলে ভুল ভাবে সুমন্তকে । কিন্তু আমরা জানি, ভেতরের মানুষটা বড় বেশি সরল, আবেগে টলােমলাে-কখনাে যেন সে দন্তন্য রূহমান, কখনাে বা রাশীক । তাই তাে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে সে গড়ে তােলে ‘Childream Society',' তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টায় তাদের সাথেই মিশে যায় সে প্রতিনিয়ত। শুধু স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা নয়, অন্যের মধ্যে স্বপ্নের শিখা জ্বালিয়ে দেয়ার অবিশ্বাস্য এক ক্ষমতা আছে সুমন্তর। তাই নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি একদল কিশাের-কিশােরী ঘিরে থাকে তাকে । অনুপ্রেরণা মেনে তার মতােই হতে চায় তারা। নিজের টুকরাে টুকরাে স্বপ্ন-সাধ তাদের মধ্যে বুনে দিয়ে ঘুরে ফেরে সুমন্ত, ফেরে নিজের ছােট্ট জগন্টাতে । তাকে দেখে আনন্দে গা ঘেঁষে আদর জানায় পােষা সাদা বেড়ালটা, মাছগুলাে খলবল করে ওঠে অ্যাকুরিয়ামে, এমনকি তার অপেক্ষায় থাকা লেখালেখির টেবিলটাও যেন হেসে ওঠে। একবার-সুমন্তের হাতে নতুন কোনাে চরিত্রের, নতুন কোনাে গল্পের জাল বােনা দেখবে বলে!