দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা পেতে ধারাবাহিক পরিশ্রম করে যেতে হয়। প্রতিনিয়ত নিজেকে একটু একটু করে এগিয়ে নিতে হয়। সফল হওয়ার পথে কোনো অবসর বা বিরাম নেই। এ পথে থেমে যাওয়া মানে পথ হারিয়ে ফেলা। সফল ব্যক্তিদের জীবন হিসেব করলে দেখা যায়, তাদের সফলতার মূলমন্ত্র ছিল—লক্ষ্য পানে অবিরাম এগিয়ে যাওয়া এবং নিয়মিত আমল করা।
মুমিন-জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং জাহান্নাম থেকে বেঁচে জান্নাতে যাওয়া। এটিই মহা সফলতা। পবিত্র কুরআনের ভাষায় আল-ফাওযুল কাবীর। এ জন্য একজন মুমিন আল্লাহর বিধান মেনেই তার জীবন পরিচালিত করে। মুমিন কখনো আমলশূন্য অলস বসে থাকতে পারে না। তবে সামনে অগ্রসর হতে হলে আল্লাহর রহমত ও সাহায্য অপরিহার্য। আর আল্লাহ কেবল তাদেরই সাহায্য করেন, যারা নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার মজবুত সংকল্প করে এবং অল্প করে হলেও নিয়মিত আমল জারি রাখে।
এ বিষয়ে ইমাম ইবনু রজব হাম্বালি r-এর একটি অনবদ্য রচনা হলো আল-মাহাজ্জাহ ফী সাইরিদ দুলজা। আলহামদুলিল্লাহ, উপকারী সেই গ্রন্থটিরই অনুবাদ—নিজেকে এগিয়ে নিন। গ্রন্থটিতে আমলবিষয়ক এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা জানা সবার জন্য জরুরি।
ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী
ইমাম ইবনে রজব জন্মগ্রহণ করেন বাগদাদে ১৩৩৫ খ্রিস্টাব্দে (৭৩৬ হিজরি)। তার দাদা ছিলেন একজন ধর্মতত্ত্ববিদ, ইসলামী শাস্ত্রের বিশিষ্ট বিদ্বান, বিশেষ করে হাদিস শাস্ত্রের। তার বাবাও বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং বহু পণ্ডিতগণে কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তার বয়স যখন পাঁচ, ইবনে রজবের পরিবার দামেস্কে স্থানান্তরিত হয়, তখন তিনি জেরুজালেম সফর করেন এবং সেখানে আল-আলা'ঈর কাছে জ্ঞানার্জন করেন। এরপর তিনি বাগদাদে যান এবং সেখান থেকে মক্কা গমন করেন। মক্কায় তার পিতা তার শিক্ষার জন্য সু-ব্যবস্থা করে রাখেন। এরপর তিনি মিশর সফর করেন এবং এরপর আবার দামেস্কে ফিরে যান, সেখানে তিনি ছাত্রদের শিক্ষাদান শুরু করেন। তিনি ইবনে আন-নাকীব (মৃত্যু ৭৬৯ হিজরি), আস সুবকি, আল ইরাকি (৮০৬ হিজরি), মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাইল আল খাব্বাজ এবং প্রমুখ বিদ্বানের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি যুগশ্রেষ্ঠ 'আলিমে দ্বীন ইবনে কায়্যিম আল যাওজিয়্যাহ রহঃ এর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার কাছে অধ্যয়ন করেন। ইমাম আন-নববী রহঃ কর্তৃক রচিত প্রসিদ্ধ গ্রন্থ "চল্লিশ হাদীছ" এর একটি বৃহৎ ব্যাখ্যা (শরাহ) ইবনে রজব রচনা করেছিলেন (জামি' আল-উলুম ওয়াল হিকাম) যা আজ পর্যন্ত চল্লিশ হাদীছের শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যা গ্রন্থ হিসেবে সমাদৃত হয়ে আসছে। জীবনের শেষ দিকে তিনি শ্রেষ্ঠতম হাদীছ গ্রন্থ ছহীহ আল-বুখারীর ব্যাখ্যা রচনা শুরু করেন কিন্তু "জানাজার সালাত অধ্যায়ে" পৌঁছার আগেই মৃত্যু বরণ করেন। তিনি সেই গ্রন্থের নাম দিয়েছিলেন ফাৎহুল বারী যা পরবর্তীকালে দার ইবনে জাওযী থেকে ৭ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ইবনে রজবের মৃত্যুর ২০ বৎসর পর ইবনে হাজার আস্কলানী রহঃ ছহীহ আল-বুখারীর ব্যাখ্যা রচনা শুরু করেন এবং ইবনে রজব আল হাম্বালি রহঃ এর সম্মানে গ্রন্থের শিরোনাম দেন ফাতহুল বারী যেটা ছহীহ আল বুখারীর শ্রেষ্ঠতম ব্যাখ্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।