এই পাঁচটি বছরে প্রতিবারই প্রকৃতিতে ফাগুন এসেছে, বসন্তও এসেছে— জানো তো? ফাগুন মাসেই জন্মেছিলাম কিনা, তাই ফাগুনকে ভুলতে পারি না। শুধু সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটির দেখা পাইনি— একটি বারের জন্যও না; মনেও করেনি সে। —এভাবে বলো না, প্লিজ! —তা ঠিক, এভাবে বলে আর কী লাভ? কিন্তু খুব মিস করি, জানো? বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললে, ‘আজও মনে আছে তোমার?’ —থাকবে না কেন? আমি তো কিছু ভুলতে চাইনি। চাইলে হয়তো ভুলে যেতাম। হ্যালো...। —বলো। —চুপ করে কেন? —আজ রাখি। —রাখবে? —হুম। আমি বললাম, ভালো থেকো। তুমিও বললে। ফোনটা রাখতেই নিজের অজান্তেই বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো, আর অনেক দিনের জমানো ব্যথাগুলো যেন সে দীর্ঘশ্বাসের সাথে বেরিয়ে গেল। আমি শোওয়ার ঘরের বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিই, হারিয়ে যাই অতীতের স্মৃতিতে। সকালের চায়ের মতোই ছিলে তুমি আমার অভ্যাস। দিন শেষে সন্ধ্যা নামতো চারিদিকে একটা মায়াবী আবেশ ছড়িয়ে। আমরা তখন বারান্দায় বসি। বাতাস আলতোভাবে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে যায় শরীরে। দুর থেকে ভেসে আসে রবি ঠাকুরের গানের সুর। আমি গানটা শোনার চেষ্টা করি। গানের কথাগুলো স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয়, অদিতি মহসিনের গলা ভেসে আসে— ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই/চিরদিন কেন পাই না?’
মায়াবী আগুনঃ
বাড়িতে ঢোকার পর কোন কথা না বলেই নিজের ঘরে গিয়ে খিল দিয়ে শুয়ে পড়ে সবুজ। রাতের অন্ধকারের চেয়েও গাঢ় এক অন্ধকার বুকে চেপে বসেছে তার। অপমানের লজ্জা আর কষ্টে বুকটা ভেঙে যেতে থাকে। আজ তার ভালোবাসার মানুষ মায়ার সাথেও দেখা হলো না। আর কখনও হবে কিনা কে জানে। নাই বা হলো।
এই জীবন, এই পৃথিবী মা, বোন, মায়া সবকিছুকেই কেমন যেন অর্থহীন মনে হয় মামুনের। সব বন্ধন থেকে মুক্তি পেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কিভাবে সেই মুক্তি ঘটতে পারে, সে জানে না। শুয়ে শুয়েই সিদ্ধান্ত নেয়, কালই ঢাকায় ফিরে যাবে সে। তারপর যা করার করবে। এক সময় গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় সবুজ ।
ভোর হতে তখনও বাকি। ঢাকা যাওয়ার সকাল সাতটার বাস ধরতে হবে। তাই আঁধার থাকতেই বেরিয়ে পড়ে সবুজ। শরতের আকাশে সাদা সাদা মেঘ। কি সুন্দর নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আহা! যদি ওদের মতো হতে পারতো সে! রাতের ভাবনাগুলো আবার চেপে ধরে সবুজকে। সেই একই ভাবনা। সাতদিন। বিশ হাজার টাকা। কিন্তু কিভাবে সম্ভব?