নেত্রকোনারই সংলগ্ন সুনামগঞ্জের ধলগ্রাম নিবাসী প্রাকৃতজনের কবি শাহ আব্দুল করিমের সেই অবিস্মরণীয় সংগীতটি স্মরণ করছি
আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম। গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু-মুসলমান মিলিয়া বাউলা গান ঘাটু গান গাইতাম ॥ বর্ষা যখন হইত গাজীর গান আইত রঙ্গে ঢঙ্গে গাইত আনন্দ পাইতাম বাউলা গান ঘাটু গান আনন্দের তুফান
গাইয়া সারিগান নাই দৌড়াইতাম ॥ করিমের সংগীতের এই কয়েকটি পঙক্তির মধ্যে কবির নস্টালজিয়া’র প্রকাশই ঘটেনি শুধু, এ অঞ্চলের সংস্কৃতির মূল ধর্মই এতে বিধৃত হয়েছে।
হামিদুর রহমানের লেখা ‘নেত্রকোনার বাউল কবি’ বইয়ের পাণ্ডুলিপির পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বরাবরই করিমের এই সংগীতটি আমার মনে পড়ছিল। মনে হচ্ছিল: হামিদুর রহমান যেন করিমের এই সংগীতটিরই ভাবসম্প্রসারণ ঘটিয়েছেন। এককভাবে বাউলা গান’ নয় শুধু, এ গানের অনুষঙ্গরূপে এ অঞ্চলে প্রচলিত গাজীর গান, ঘাটু গান ও সারিগানের কথাও করিম বিমুগ্ধচিত্তে স্মরণ করেছেন। ওই সব গানের প্রসঙ্গ ও প্রকরণের অনেক কিছুই এ অঞ্চলের বাউলা গান’-এর আধারীভূত হয়েছে। | বাউলা গান প্রসঙ্গে আরেকটি সংগীত-প্রকরণের কথা অবশ্যই স্মর্তব্য। সেটি কবিগান। বিশেষ করে বাউলা গানে মালজোড়া’র প্রবর্তন তাে ঘটেছে কবিগানের ধারাকে অঙ্গীকার করেই। কবিগানে যেমন দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী কবিয়াল পৌরাণিক বা সামাজিক বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে গানে গানে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রবৃত্ত হন, মালজোড়াতেও দুজন বাউলের মধ্যে সে রকমই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঘটে। তবে কবিগান ও বাউলা গানের মালজোড়ার পরিবেশনায় কিছুটা পার্থক্যও
হামিদুর রহমান
হামিদুর রহমান-এর জন্ম ২৮ চৈত্র ১৩৫২ বঙ্গাব্দ, ১১ এপ্রিল ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে নেত্রকোনায়। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশােনা শুরু হয় বারহাটার সি, কে. পি ইনস্টিটিউশন থেকে। মূলত তিনি একজন নিভৃতচারী লেখক। পিতা মাে. ইসহাক । আলী এবং মাতা আলেকজান বিবি। পৈতৃক নিবাস শুনই, আটপাড়া, নেত্রকোনা। অসংখ্য ছড়া ও গদ্য রচনা করেছেন শিশুদের। জন্য। যা প্রকাশিত হয়েছে তার সময়কার সাহিত্য সাময়িকীগুলােতে। রচনা করেছেন দুই শত-এর বেশি মৌলিক প্রবন্ধ। লােকসাহিত্য নিয়ে রয়েছে তার অসাধারণ পরিশ্রমী সাহিত্যকর্ম। ঐতিহ্য অন্বেষার বােধ ও প্রজ্ঞা নিয়ে গ্রামের নিভৃত কোণে গড়ে তুলেছেন তিনি পাঠের সাম্রাজ্য, সমৃদ্ধ এক আলাের জগৎ-গ্রাম পাঠাগার। গ্রামের নিভৃত পল্লীতে বসে লেখালেখি তার পছন্দের জায়গা। বার্ধক্যে উপনীত হলেও তিনি নবীন, এবং ভালােবাসেন বই ও সাহিত্যকে। প্রতিনিয়তই তিনি লিখছেন নানান অনুষঙ্গ নিয়ে। বর্তমানে নেত্রকোনার লােকসংস্কৃতি নিয়ে বড় পরিসরে গবেষণামূলক কাজ করছেন। অন্যান্য গ্রন্থ জীবনবৃত্তে (আত্মজৈবনিক স্মৃতিকথা), নান্দনিক ২০১৩ দুষ্ট লীলাবতী (শিশুতােষ ছড়াগ্রন্থ), রাঁচী ২০১৪ মুক্তিযুদ্ধ একাত্তর (প্রবন্ধ), বিভাস ২০১৬ আটপাড়ায় মুক্তিযুদ্ধ (মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস), অয়ন প্রকাশন ২০১৮ নেত্রকোনার বাউল কবি (প্রবন্ধ), ২০১৮