ফ্ল্যাপে লিখা কথা মাতৃভাষার জাদু নাকি নারীর আকর্ষণ, জানি না, তার পাশেই বসলাম। চাঁদ আরও উপরে উঠে এসেছে। দামাল হাওয়া উড়িয়ে নিচ্ছে রেশমি চুল। কখনো তা এমনভাবে জাফরি কাটছে যে তার মুখাবয়ব হয়ে উঠছে মিসরের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী মোনা জাকির মতো। হোটেলের লবি থেকে ভেসে আসছে কুলসুমের গান, ‘ও সুমুদ্র, এবার ঘুমাও। আমি তোমার আঁখিতে এঁকে দেব চাঁদের চুমু। অশ্রু মুছিয়ে দেব ভালোবাসায়। ও জল পাই পাতা, ওঁকে কাঁদতে বারণ কর। আমি আসছি।’
আকস্মিক যে যুদ্ধ নেমে এসেছিল মিশরের বিরুদ্ধে- ব্রিটেন ফ্রান্স ও ইসরাইলের দ্বারা; সে যুদ্ধ যেন আমাকেই গ্রাস করল। আমার চোখে সামনে ক্লিওপেট্রার সেই ছবি ভেসে উঠল, যেখানে তিনি অনাবৃত বক্ষে শুয়ে আছেন বিশাল জাহাজের খোলা ডেকের সুসজ্জিত পালংকে। সখি চার্মিয়নের বাড়িয়ে দেখা হাতে দ্রাক্ষারস। অদূরে, আরেক জাহাজ থেকে চেয়ে আছে বিস্মিত মার্ক এন্টনি! আমার শরীর কাঁপতে শুরু করল। এটা কি মাটির পৃথিবী, না স্বপ্ন?
যেখানেই যাই, রহস্য আমাকে আঁড়ে ধরে। যা কিছুই দেখি, তার মধ্যেই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে ইতিহাস। জয়-পরাজয়ের গলিঘিঞ্জির মাঝে উদ্ভাসিত হয় মানুষের মুখ- তাদের কেউ কেউ ফেরাউন, কেউ মুসা। অমরত্বের চিহ্ন নিয়ে জেগে ওঠা রামেসিসের মামি আর ভাগ্যের বরপুত্র মহাবীর আলেকজান্ডারের স্মৃতির সামনে দাঁড়িয়ে কে পারে কেবল বাস্তব জগতের বাসিন্দা হতে?
চলুন ঘুরে আসি : চির জিজ্ঞাসার সেই প্রাণভূমি-মিসর!
বুলবুল সরওয়ার
জন্ম গোপালগঞ্জে। ১৯৬২’র ২৭শে নভেম্বর। ৯ ভাইবোনের মধ্যে কনিষ্ঠ। মিশনারি স্কুলের প্রভাবে অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা তার মজ্জাগত। পরিবারেও ছিল শিল্প-সাহিত্যের আবহ। বিশেষত বাবার প্রভাব এবং বড় তিন ভাইয়ের উৎসাহ তাকে শেষপর্যন্ত সাহিত্যেই থিতু করে দিয়েছে। লেখালেখি শুরু শৈশবে। আজাদ-ইত্তেফাক থেকে শুরু করে দেশের অধিকাংশ দৈনিক ও সাময়িকীতে লিখেছেন। কলকাতা-আসামেও সমান জনপ্রিয়। ১৯৮৯তেই ভারত থেকে প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ‘হিটলারের লাশ’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৬। লিখেছেন কবিতা, গল্প, শিশুসাহিত্য, পত্রকথা। অনুবাদও কম নয়; ১৫টি বিশ্বসেরা উপন্যাস। ভ্রমণে তার বিশেষ মুনশিয়ানা। জনস্বাস্থ্যের অধ্যাপক বুলবুলের প্রিয় বিষয় চিঠি, আড্ডা, কফি এবং নজরুল। স্ত্রী দিলরুবা মনোয়ার, কন্যা আয়েশা তাজিন মাশরুবা ও পুত্র আয়হান নাভিদ নওরোজকে নিয়ে বাস করেন ঢাকার শ্যামলীতে।