মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী চট্টগ্রামের নাট্যচর্চার প্রতিভাদীপ্ত নাট্যজনদের অন্যতম ছিলেন রবিউল আলম। তাঁর লেখা নাটক বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত ও মঞ্চস্থ হয়। বর্তমান নাট্যসমগ্রে সত্তর দশকে লেখা সেইসব নাটকই গ্রন্থবদ্ধ করার পরিকল্পনা। এতে মোট ৭টি নাটক অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি নাটক ইতোপূর্বে ত্রৈমাসিক পত্রিকা নাট্যপত্রে প্রকাশিত। রবিউল আলমের নাটকের একটা বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করবার মতো। তাঁর অধিকাংশ নাটকের পটভূমি গৃহ-অভ্যন্তর। একটি বা দুটি নাটকে শুধু দেখা যায় পায়ে চলার পথ বা উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। ইবসেন এবং চেখভের নাটকে যেমন দেখা যায় ড্রয়িং রুম বা বসবার ঘরেই সব ঘটনা ঘটছে। ইউরোপের অবক্ষয়, বেদনা সবকিছু প্রকাশিত হচ্ছে গৃহকোণে। বাংলাদেশের নাটকে এই গৃহকোণ গুরুত্ব পায়নি। মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের সংকটগুলো এড়িয়েই গেছে। তাতে বাংলাদেশের নাটক হয়ত একটা ভিন্ন চেহারা পেয়েছে কিন্তু একটা বিশাল শ্রেণি উপেক্ষিত হয়েছে। রবিউল আলমের নাট্যসমগ্র ১ নাট্যানুরাগী ও নাট্যকর্মীদের সংগ্রহে রাখার মত একটি নাট্যসংকলন। যা নতুন নাট্য রচয়িতাদের জন্য দিকনির্দেনার কাজ করতে পারে।
রবিউল আলম
জন্ম বগুড়ায় (নভেম্বর, ১৯৪৬)। তবে কর্মস্থল চট্টগ্রামেÑপেশা ও নেশা উভয় ক্ষেত্রেই। তিনি চট্টগ্রামের তির্যক নাট্যগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠার (১৯৭৪) মাধ্যমে গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন। নাট্যক্ষেত্রে রবিউল আলমের পরিচয় নানামুখী হলেও তিনি মূলত নাট্যকার। মধ্যবিত্ত জীবনের আনন্দ-বেদনাকে খুব কাছে থেকে ধরতে সিদ্ধহস্ত তিনি। অনুবাদ করেছেন শেক্সপিয়র (অ্যাজ ইউ লাইক ইট), মলিয়ের (বিবি পাঠশালা), হ্যারল্ড পিন্টার (চারটি নাটক) ও ইয়াসমিনা রেজার (দাফনের পরের সংলাপ) নাটক। মিখাইল শ্চেদ্রিন, আবু রুশদ, মাহ্বুব-উল আলম ও সুচরিত চৌধুরীর গল্প অবলম্বনে নাটক লিখেছেন কয়েকটি। সত্তর দশকে সম্পাদনা করেছেন তির্যক নাট্যত্রৈমাসিক পত্রিকা। বেতার টেলিভিশনের নাট্যকার, অভিনেতা ও অতিথি প্রযোজক।