হুমায়ুন আজাদের কিছু দীর্ঘ ও হ্রস্ব সামাজিক রাজনীতিক প্রবন্ধের সংকলন নরকে অনন্ত ঋতু। এতে রয়েছে ‘জাতীয় সংস্কৃতি কমিশনঃ তার প্রলাপ বা প্রতিবেদন’, ‘বাঙালিঃ একটি রুগ্ন জনগোষ্ঠি?’, ‘বইয়ের বিরুদ্ধে’ নামের তিনটি দীর্ঘ অসাধারণ প্রবন্ধ, এবং একগুচ্ছ তীক্ষ্ণ প্রথাবিরোধী প্রবন্ধ। যখন সবাই মেনে নিয়েছিলো এরশাদি সংস্কৃতি, তার কমিশনের প্রস্তাব, তখন শুধু হুমায়ুন আজাদই এর প্রতিবাদ করেছিলেন একটি প্রচণ্ড প্রবন্ধ লিখে; তিনি ছিড়েফেড়ে দেখিয়েছিলেন ওই প্রতিবেদনের অপ্রকৃতিস্থতা। এরশাদ নেই, কিন্তু তার কমিশনের সদস্যরা আজো চারপাশে আছে গৌরবের সাথে; বর্তমানের ‘গণতন্ত্রী’ সরকার তাদের পুরস্কৃত করছে নানাভাবে। এক নরক থেকে আমরা উপনীত হচ্ছি আরেক নরকে। বাঙালিবিষয়ক প্রবন্ধটিতে তিনি রচনা করেছেন সমকালের বাঙালির আভ্যন্তর সূত্র, যা বিভীষিকা জাগিয়ে তোলে। প্রবন্ধটি আধুনিক বাঙালির নৃতত্ত্ব। বই সম্পর্কেও প্রথাগত ধারনা ভেঙে দিয়েছেন তিনি। এরশাদি দশক সম্পর্কে তিনি লিখেছেন একটি প্রবন্ধ, যাতে ধরা পড়েছে ওই অপব্যক্তিটি ও তার সময়ের ভেতর-বাইরের ভীতিকর পঙ্কিল রূপটি। এ ছাড়াও রয়েছে একগুচ্ছ তীব্র শাণিত হ্রস্ব প্রবন্ধ বা কলাম, যেগুলো বেরিয়েছিলো পূর্বাভাস-এ। নরকে অনন্ত ঋতুতে বাঙলার নরকের রূপটি জ্বলজ্বল ক’রে উঠেছে, কিন্তু এতে ভবিষ্যৎ স্বর্গের জন্যেই ব্যাকুলতা প্রবল।
হুমায়ুন আজাদ
হুমায়ুন আজাদ (২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ - ১১ আগস্ট ২০০৪; ১৪ বৈশাখ ১৩৫৪ - ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, সমালোচক, গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী, কিশোর সাহিত্যিক এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকার। তিনি বাংলাদেশের প্রধান প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক যিনি ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান- ও সংস্কারবিরোধিতা, নিরাবরণ যৌনতা, নারীবাদ ও রাজনীতি বিষয়ে নির্মম সমালোচনামূলক বক্তব্যের জন্য ১৯৮০-র দশক থেকে ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের উপর কাজ করার জন্য জার্মান সরকারের নিকট একটি বৃত্তির আবেদন করেছিলেন। ২০০৪-এর ৭ আগস্ট জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান।
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ আগস্ট রাতে একটি পার্টি থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আবাসস্থলে আকস্মিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হুমায়ুন আজাদ। ১২ আগস্ট ফ্ল্যাটের নিজ কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।