না-গল্প না-কবিতা শাদা চোখে অনেকটা গল্প ও কবিতার মাঝামাঝি একটি রূপ। কিন্তু এর শিল্পরূপ দেখতে গেলে দেখা যাবে-কবিতার স্বাদটি যেমন অক্ষুণ্ন রয়েছে, তেমন গল্পের আবহটাও জমে উঠেছে। তার অর্থ কি এই যে, এর সমস্ত লেখাতেই তা ধরে রাখা সম্ভব হবে? যেমন সংজ্ঞা দিয়ে রাখা যায়নি গল্প কবিতাকেও। এটি এমনি একটা টার্ম বা বিষয়-যা গল্পের ফরমেট বা সংজ্ঞায়িত বিষয়াদিকে ভেঙে দিয়ে কবিতার শাঁস বা রসাস্বাদনকে ছেঁকে তুলে একটি ব্লেনডারকৃত নতুন স্বাদ বা টেস্টের অনুসন্ধান করে। সাহিত্য বিচারে না-গল্প না-কবিতা একটি নতুন কনসেপ্ট, নতুন আইডিয়া এবং নতুন মাত্রা-ইতিহাস ও এর কালবিস্তারি দর্পণে। অনেকের কাছে বিষয়টি পরিচিত না-হলেও এটি সাহিত্যের সেইসব অনাবিষ্কৃত অধ্যায়ের পাঠটিকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, যেখানে শিল্পের গূঢ় তত্ত্বার্থ ঘুমিয়ে থাকে নিজেরই অন্তরালে; যখন থেকে বাংলা ভাষার সাহিত্যযাত্রাকাল শুরু। চর্যাপদ থেকে সতের দশক পর্যন্ত বাংলা ভাষার প্রায় সবকটি শাখার সাহিত্যকর্ম, অন্যার্থে প্রাপ্ত সকল গ্রন্থ রচিত হয়েছে কাব্যাকারে বা গীতবলয়ের আবহে। না-গল্প না-কবিতা ইস্যুটি সাহিত্যের নতুন শাখা হলেও পূর্বোক্ত অনেক রচনায় এর খণ্ডচিত্র বা বিচ্ছিন্ন উপস্থিতি লক্ষণীয়। একটু চোখ-কান খোলা রাখলেই এর মিল ও অমিলটুকু খুঁজে পাওয়া যাবে। সে প্রেক্ষিতে এগুলো নতুন সংস্করণরূপ ধারণ করলেও মূলে এর স্বাদ বা প্রবাহমানতা রয়ে যাবে-যা না-গল্প না-কবিতার বিমূর্ত যাত্রাকে মূর্ত করে তুলবে। এখানেই লেখকের সার্থকতা এবং পাঠকের লাভটাও একটু বেশি। কেননা সকল শিল্পের অনন্যোজ্জ্বলতার পাশাপাশি নতুন মুখে নতুন আহারের মতোই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারবেন লেখক-পাঠক-সমালোচক। না-গল্প না-কবিতা শিল্পের সেই নতুন কমিটমেন্ট অথবা দীপ্র যাত্রা ও দৃপ্ত উচ্চারণ।