… আমি রাসুল (ﷺ)-কে তিনবার বলতে শুনেছি—কিছুক্ষণের মাঝে তোমাদের কাছে এক জান্নাতি ব্যক্তির আগমন ঘটবে। আর তিনবারই আপনি এসেছেন। তাই আমার আগ্রহ হলো আপনার সঙ্গে থেকে আপনার আমলগুলো দেখে অনুসরণ করব। কিন্তু আপনাকে তো বেশি আমল করতে দেখলাম না। কোন আমলটি আপনাকে ওই মর্যাদায় পৌঁছিয়েছে?” তিনি বললেন—আমার আমল তো তা-ই, যা আপনি দেখেছেন।
তারপর ফিরে আসার সময়ে তিনি আমাকে ডেকে বললেন, “আমার আমল তো তা-ই, যা আপনি দেখেছেন। তবে আমি অন্তরে কোনো মুসলিম ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষ রাখি না এবং আল্লাহর দেওয়া কোনো নিয়ামতের ওপর কারও সাথে হিংসা করি না।”” এ কথা শুনে আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনিল আস (রাদি.) বললেন—এই আমলই আপনাকে ওই মর্যাদায় পৌঁছিয়েছে আর আমরা এর সামর্থ্য রাখি না।”’
অনৈক্য ও বিচ্ছিন্নতা উম্মাহর ফাসাদের মূল। মতভিন্নতা মানেই অনৈক্য নয়, বরং কিছু কিছু মতভিন্নতার মাঝেই রয়েছে ঐক্যের প্রশস্ততা। সালাফদের মাঝে মতভিন্নতা ছিল, এরপরও তাঁরা একতাবদ্ধ ছিলেন। বিপরীত পক্ষের রায়ের প্রতি সালাফদের শ্রদ্ধা ছিল। মাযহাব, মাসলাক ও রায়ের ভিন্নতা সত্ত্বেও সালাফরা পারস্পরিক হৃদ্যতা ও ভ্রাতৃত্বের হিফাযত করে গেছেন।
‘মুসলিম উম্মাহর ঐক্য’ বইটি তাদের সেই আদর্শ নিয়েই লেখা। এতে মতভেদের কারণ, মতভেদের কারণে সৃষ্ট ফাসাদ, যেসব অহেতুক বিষয়ে মতভেদ হয়, বিচ্ছিন্নতার ইসলামি বিধান, ইত্যাদি বিষয়ে বইতে আলোচনা করেছেন ইমাম ইবনু তাইমিয়া। সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও টীকা লিখে বইটিকে পূর্ণতা দিয়েছেন শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ।
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রা.)
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. জন্ম ও বংশ পরিচয় ও ৬৬১ হিজরীর ১০ রবিউল আউয়াল সােমবার দামেস্কের নিকটবর্তী লেখক লেখক হাররান প্রদেশে তিনি জন্ম গ্রহণ এনায়েত করেন। তার পুরাে নাম তকিউদ্দীন আবুল আব্বাস আহমদ গলেখক চত। ইবনে আবদুল হালিম ইবনে আবদুস সালাম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মােহাম্মদ ইবনে তাইমিয়া আল হাররানী । তবে তিনি ইবনে তাইমিয়া নামে বেশী পরিচিত।
শিক্ষা জীবন : ইমাম ইবনে তাইমিয়ার পিতা আবদুল হালিম হাম্বলী মাযহারের একজন মশহুর আলেম ছিলেন। তিনি সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ছিলেন। ইবনে তাইমিয়া ১৭-২০ বছর পর্যন্ত পিতার কাছে শিক্ষা লাভ করেন। পিতা পুত্রকে কুরআন, তাফসীর, হাদীস, আরবী ভাষা প্রভৃতি উত্তমরূপে শিক্ষা দেন। ইমাম ইবনে তাইমিয়া শামসুদ্দীন আবদুর রহমান আল-মাফদেসীর কাছেও আইন শাস্ত্র পড়েন। অসাধারণ মেধা, আশ্চর্য স্মৃতিশক্তি, সুক্ষ বিচারশক্তি ও সুদক্ষ তাকিকতার পারদর্শী হয়ে উঠেন এবং সুধী সমাজে প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন।
প্রধান বিচারপতির পদ প্রত্যাখানঃ তাঁর বয়স যখন ৩০ বৎসর, তখনু তাঁর যশ বা খ্যাতির জন্য সরকার প্রধান তাঁকে লােভনীয় পদ দেশের প্রধান বিচারপতি পদে নিয়ােগ দিয়ে সরকারপন্থী করার জন্য প্রস্তাব পাঠান; কিন্তু তিনি তাঁকে না করে দিয়ে শিক্ষকতা পেশায় নিয়ােজিত থাকেন।
রচনাবলী ও ইমাম ইবনে তাইমিয়া ছিলেন নিরলস জ্ঞানসাধক। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে পূর্ববর্তী সকল শ্রেণীর লেখকদের রচনাবলী পড়তেন, তাদের চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচিত হতেন এবং অবিশ্রান্ত লেখনী চালনা করে। নিজের মতামত লিপিবদ্ধ করতেন। কথিত আছে যে, তিনি প্রায় পাঁচশত পুস্তক রচনা করেন। কিন্তু বর্তমানে ৬৪টির অসিস্ত মিলেছে। যা মুসলিম গ্রন্থ প্রণেতাদের মধ্যে অন্যতম। এটা তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে প্রধান দুটি কারণে ১। চিরকুমার ২। জীবনের অধিকাংশ সময় কারাবরন। অনেকের মন্তব্য- জীবনের এক তৃতীয়াংশ তিনি কারাবরন করেন। ফলে নির্জনে ধ্যানমগ্ন এ সমস্ত লেখা সম্ভব হয়েছে।
মৃত্যবরণ ও কারাবরন অবস্থায় তাঁর যখন কাগজ-কলম ছিনিয়ে নেওয়া হল, তখন তিনি ব্যথিত হয়ে কয়লা দিয়ে। ২০ দিন দেওয়ালে লিখেন। এরপর অন্তিম ডাক আসে, সে দিনটি ছিল সােমবার মধ্যরাত ২০ যিলকদ, ৭২৮ হিজরী সন। তাঁর জানাযায় প্রায় দু'লক্ষ পুরুষ অংশ গ্রহণ করে। দামেস্কের সুফিয়া কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা। হয়। সে কবরস্থানের সবগুলাে কবর ভেঙ্গে সিরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনসমূহ নির্মিত হয়েছে; কিন্তু ইবনে। তাইমিয়ার কবরটি আজও বিদ্যমান রয়েছে।