মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম (হার্ডকভার)
বইঃ মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শোনানো হয় তবে সে ইতিহাসে ইসলামের উপস্থিতি নেই। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বলতে গেলেই একটা শ্রেণী বানোয়াট কাহিনি শোনায় আরেকটা শ্রেণী ইসলামকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে মনগড়া বুলি আওড়ায়! আর তা শুনে নব্য জেনারেশন দ্বিধায় ভোগে।তবে কি মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ইসলাম সাংঘর্ষিক? ইসলাম মুক্তিযুদ্ধকে বিরোধীতা করেনি বরং ইসলাম মুক্তিযুদ্ধাদের তখন অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলো।মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি পরতে পরতে ইসলামের ভূমিকা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে আলেম সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে! স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ইসলামের আলোকে আলোচনা করে মুক্তিযুদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করা হতো। ইসলাম কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেনি,ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিলোনা,ইসলাম বির্তকের সৃষ্টি করেনি উল্টো একটা শ্রেণী না বুঝে ইচ্ছাকৃত বিভিন্ন সস্তা যুক্তি দাড় করিয়ে তৎকালের ইসলামকে বির্তকিত করার চেষ্টা করেছে এবং এখনো করছে। বঙ্গবন্ধু ইসলামকে প্রেজেন্ট করতে গিয়ে কোনো ধর্মকে হেয় প্রতিপন্ন করেননি বরং সবাইকে যার যার ধর্মের প্রতি আনুগত্য থাকতে আহ্বান করেছেন। রাজাকার আসলেই কারা? কোন তিন কারণে তৎকালে তারা রাজাকার হয়েছিলো? জামায়াতে ইসলামিকে কেন রাজাকার বলা হচ্ছে?শুধুই জামায়তকে রাজাকার বলা কতটা যৌক্তিক?মুক্তিযুদ্ধে ইসলামি দলগুলোর ভূমিকা কি ছিলো? মুক্তিযুদ্ধে আলেম সমাজের ভূমিকা কি? ইসলাম কিভাবে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছে?ইসলাম কিভাবে মুসলিমদের মুক্তিযুদ্ধ করতে অনুপ্রাণিত করেছে? মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকার আমাদের জন্য কিরুপ অবদান রেখেছে? মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের কি অবদান ছিলো? মুক্তিযুদ্ধের সময় কেন ভারত আমাদের নিকট নত হতে হয়েছে? ইত্যাদি সকল বিষয়গুলো জানা যাবে বইটি পড়লে।বইটি অনেক তথ্যবহুল! পূর্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধের হরেক রকম বানোয়াট বহু কাহিনি শুনেছি! বইটি পড়লে সেসব ভ্রান্ত ধারণা আমাদের কেটে যাবে আশা করি।
বই : মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম লেখক : পিনাকী ভট্টাচার্য রিভিউ---- -------------------- আমি দীর্ঘ আট ঘণ্টা সময় নিয়ে বইটি পড়েছি। এই পুরো সময়টাতেই আমার কাছে মনে হয়েছে আমি মুক্তিযুদ্ধের ভিতরে আছি। একাত্তরে ফিরে গেছি। বঙ্গবন্ধুর ৭-ই মার্চের সেই রেসকোর্স ময়দান থেকে ভেসে আসা আওয়াজ আমাকেও যুদ্ধে যোগ দিতে প্রলুব্ধ করছে। আমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে আমরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। পশ্চিম পাকিস্তানের জালিমেরা আমাদের নিরীহ বাঙালিদের কচুকাটা করছে। চার দিক থেকে শুধু লাশের গন্ধ ভেসে আসছে। আরো কত কি...... বিশেষ করে এ দেশের কিছু বুদ্ধিজীবী নামের পরজীবীরা দাবী করেন, মুক্তিযুদ্ধে ইসলাম পরাজিত হয়েছে। সেক্যুলার পন্থীরা বিজয়ী হয়েছে । কিন্তু সত্যানুসন্ধানে দেখা যায় পুরো মুক্তিযুদ্ধ জুড়ে ইসলামি আদর্শের বয়ান উপস্থিত ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও সে কথা উল্লেখ করেছেন এভাবে - 'জনগণকে ইসলাম ও মুসলমানের নামে স্লোগান দিয়ে ধোঁকা দেয়া যায় না। ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা তাদের ধর্ম ভালবাসে, কিন্তু ধর্মের নামে ধোঁকা দিয়ে রাজনৈনিক কার্যসিদ্ধ করতে তারা দেবে না '। ৭-ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ' রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশা-আল্লাহ '। তাহলে বঙ্গবন্ধু'র ভাষণ এবং বিবৃতি এটাই প্রমাণ করে সমগ্র মুক্তিযুদ্ধ জুড়ে ইসলামের বয়ান উপস্থিত ছিল। আর এ দেশের মানুষ যেহেতু ইসলামি আদর্শের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে যুদ্ধ করেছে সেহেতু মুক্তিযুদ্ধে ইসলামের-ই বিজয় হয়েছে। আমরা ছোটবেলায় শুনতাম একটি সত্যকে বার বার মিথ্যে বলে চালিয়ে দিলে সেটা সময়ের আবর্তে সত্যেরই রূপ নেয়। আমার মনে হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। যেই সমাজে অসত্যের জয়-জয়কার সেই সমাজে সত্যের উচ্চারণ চাট্টিখানি কথা নয়। ৪৫ বছর যাবৎ এ মহাসত্য জানার আকুতি জানিয়ে আসছিলো এ দেশের কোটি জনতা। হাতে গোনা কয়েক জন দায়িত্বশীল লেখক ছাড়া এই চ্যালেঞ্জ কেউ গ্রহণ করেন নি। সত্য যে অমর ও অনস্তমিত সূর্য যা শুধু মুসলমানদের জন্যই নয় কল্যাণকামী মানুষকে ভুলিয়ে রাখা যায় না, যাবে না। সম্মানিত পিনাকী স্যার একজন দায়িত্বশীল লেখকের পরিচয় দিয়ে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে সেই সত্য উচ্চারণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন। অসত্যের দেয়ালে সত্যের মোড়ক উন্মোচন করেছেন। এক কথায় মুক্তিযুদ্ধের গোমর ফাঁস করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের আলেমদের যে ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল তাও বইটিতে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। তৎকালীন বরেণ্য আলেম শাহ আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী হুজুর তো সরাসরি এ কথা-ই বলে বসেছেন, ' আমাদের যুদ্ধ হচ্ছে যালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই'। তারপরও বর্তমান প্রজন্মের অনেক আলেমদের মুখে মুক্তিযুদ্ধে আলেমদের বিতর্কিত ভূমিকার কথা শোনা যায়। বইটির মাধ্যমে তাদের এই ভুল ধারণার অপনোদন করবে এবং তারা মুক্তিযুদ্ধকে নতুন ভাবে জানবে। নিজেরা ভাববে, অন্যকে ভাবিয়ে তুলবে। যদিও তৎকালীন সময়ে আলেমদের মাঝে শক্তিশালী কোন সলিডারিটি ছিল না কিন্তু বর্তমানের ন্যায় নিজেদের মাঝে এতো কাদা ছোড়াছুড়ি ছিল না। তাই আমি আশাবাদী মুসলিম উম্মাহ'র এই দূর্দিনে বইটি স্ট্যাডির মাধ্যমে ভুল বুঝাবুঝি দূরিভূত করে আলেমদের মাঝে ঐক্যের প্লাটফর্ম তৈরী করবে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী বলতে অনেকেই নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীকে বুঝেন। ক্লিয়ারলি বললে জামায়াতকেই বুঝে থাকেন। তাদের ঘারে সব দোষ চাপিয়ে দিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচেন। অথচ দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধকালে বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের ৩৫ দিন পলাতক ছিলেন। তিনিসহ অনেক ন্যাপ ও আওয়ামী লীগ নেতা আশ্রয় নিয়েছিলেন তৎকালীন জামায়াত নেতা ও বিশিষ্ট লেখক খন্দকার আবুল খায়েরের যশোরের বাড়িতে। তাই এমন ঢালাওভাবে যাতে শুধু একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে দায়ী না করা হয় লেখক সে ব্যাপারে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সরাসরি সহযোগিতা থাকার কারণে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় নি তাদেরও একটি হিস্টোরিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। মুক্তিযুদ্ধ ইস্যুতে জামায়াতের বিতর্কিত ভূমিকা তখনো স্পষ্ট ছিল এখনো স্পষ্ট। তখন জামায়তের প্রশ্ন ছিল, পশ্চিম পাকিস্তানের নেতাদের কাছে যেহেতু পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ছিল না সেহেতু হিন্দুত্ববাদী ইন্ডিয়ার উপর পূর্ব পাকিস্তানের ইসলামপ্রিয় জনগণ কিভাবে নির্ভর করতে পারে ? তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জামায়াতের আমীর প্রফেসর গোলাম আযম বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন- ' আপনি শেয়ালের কাছ থেকে মুরগি এনে বাঘের হাতে সমর্পন করতে পারেন না।'। খুব সম্ভব গোলাম আযম সাহেবের সেই দূরদর্শী চিন্তার বাস্তব ফলাফল এখন ভোগ করছে পুরো জাতি। আরেকটি দৃষ্টিগোচর বিষয় হলো সংবিধানে 'ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ' জুড়ে দেয়া। অথচ পুরো মুক্তিযুদ্ধ জুড়ে বক্তব্য, বিবৃতি ও চিঠিপত্রে কোথাও 'ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের' বয়ান উপস্থিত ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি ও গোটা বয়ানে 'ধর্মনিরপেক্ষতার' কথা না থাকলেও আমাদের রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা কী ভাবে সংযোজিত হলো তার একটি সুস্পষ্ট তথ্য-প্রমাণ ও চিত্র বইটির ভিতরে সাবলিলভাবে ফুটে উঠেছে। একটি আদর্শ দেশের নাগরিক হিসেবে সে দেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস শুধু জানাটাই গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং অন্যকে জানানোর ব্যবস্থা করাটাও নাগরিক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ববোধ থেকে বইটি সকলে পড়বেন এবং অন্যকে পড়তে উৎসাহিত করবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস পিনাকী স্যারের এই বই আরো অনেক বই এর জন্ম দেবে। বিশেষ করে যারা ইসলাম ফোবিয়ায় আক্রান্ত, যারা ইসলাম ও মুসলমান শব্দদ্বয় শুনলেই সমাজে সন্ত্রাস ও আতঙ্কের জুজু তোলেন তাদের যৌক্তিক প্রশ্নের দাঁতভাঙা জবাব দেবে এই বই। অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের দেয়াল তৈরী করবে। রাজনৈতিক বিভাজন কিছুটা হলেও দূর করবে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে চপেটাঘাত করে ইসলামি ভাবাদর্শে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাবে। চিন্তার এক জগৎ রচনা করবে। সবশেষে পরম শ্রদ্ধেয় পিনাকী স্যারের প্রতি আবারো শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি যার অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে বাঙালি জাতি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ পেল। গার্ডিয়ান পাবলিকেশন এর কর্ণধার ও আমার প্রিয় মানুষ নূর মোহাম্মদ ভাইয়ের প্রতি মুবারকবাদ, যিনি জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে দুর্দান্ত সাহসিকতার সাথে বইটি প্রকাশ করেছেন। গার্ডিয়ান পাবলিকেশন এগিয়ে যাবে দূর থেকে বহুদূর ইনশা- আল্লাহ। এই কামনায়.... আমিনুল ইসলাম ফারুক ০৯/ ০৩/ ১৮