ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ মাত্রাগত ও চরিত্রগত দিক বিবেচনায় বিরণ এক জনযুদ্ধ। একই সমতটে একাকার হয়ে গিয়েছিল সাড়ে সাত কোটি মানুষের এক বিশাল জনগোষ্ঠি, কেবলই স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষে। মুক্তিযোদ্ধারা দেশের যে প্রান্তেই যুদ্ধ করেছে এই শিশু-কিশোর সৈনিকতা সে সময় ছিল নিতান্তই স্বাভাবিক। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যে বৈশিষ্ট্যের জনযুদ্ধ তেমনটি পৃথিবীর আর কোথাও অনুষ্ঠিত হয়নি। শিশু-কিশোররা কখনো নিজেদের অপরিণত সিদ্ধান্তে, কখনো মুক্তিযোদ্ধাদের সাফল্য উদ্ধুব্ধ হয়ে, কখনো মমতার তাবৎ ভুবন হারিয়ে, কখনোবা ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে পিতা-মাতার অনুমতি নিয়ে যুদ্ধে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে। কাজেই মানবিক বিবেচনায় আজ গোটা বিশ্বে শিশু-কিশোর সৈনিকতা যতটা অবৈধ, পরিত্যাজ্য ও নিন্দিত বিবেচিত হয় একাত্তরে আমাদের অস্তিত্বের লড়াইয়ে, দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে হতা ততটাই বৈধ, অপরত্যিাজ্য ও অপরিহার্য ছিল। মেজর কামাল হাসান ভূঁইয়া একাত্তরে একজন গণযোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধ করেছেন দেশের অভ্যন্তরে দুই নম্বর সেক্টরের অধীনে।মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত শিশু-কিশোরদের ঘটনা বহু । সেই ঘটনা সমূহের মাত্র প্রতীকী কয়েকটি ঘটনা তিনি এই বইয়ে অন্তভূক্ত করেছেন তার স্মৃতি থেকে এবং গবেষণার মাধ্যমে।
মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া
মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া ২৪ জুলাই ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। যখন তিনি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন, তখন মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টরের তরুণ গণযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তি মেজর খালেদ মোশাররফ ও ক্যাপ্টেন হায়দারের সহযোদ্ধা হিসেবে তাঁর অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ১৯৭৪ সালের ৯ জানুয়ারি যোগদান করে ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কমিশনপ্রাপ্ত হন। ১৯৮৩ সালে বেইজিং ল্যাংগুয়েজ এন্ড কালচার ইউনিভার্সিটি থেকে চীনা ভাষায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৯৬ সালের ১২ জুলাই সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। মুক্তিযুদ্ধ এবং একমাত্র পুত্র সাবিতের মৃত্যুর যন্ত্রণা সত্ত্বেও, তিনি সবুজ ও উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন।