চারপাশের জিগজ্যাগ আর উন্মাতাল পপ সংস্কৃতি থেকে দূরে, শাহরিক রাজপথের আনাচকানাচে ছড়িয়ে থাকা জীবনের ছবি জ্বলে ওঠে আফসানা বেগমের গল্পে। সমাজ-বাস্তবতা ও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের ফলে বিপর্যস্ত, দুমড়েমুচড়ে গুঁড়ো গুঁড়ো জীবনরাশির নিঃশব্দ, নিঃসঙ্গ নীল অর্কেস্ট্রা বেজে চলে সেসব কাহিনির শব্দস্রোতে।
একদিকে চলমান সমাজ-পরিস্থিতি ও শোষণ, অন্যদিকে নারীর প্রতি বৈষম্য ও পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন লক্ষণীয় তাঁর কাহিনিবয়নে। দৈনন্দিন যাপিতজীবন ও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে থাকা নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের টুকরো টুকরো সুখ-দুঃখ, অভাব-অনটন, স্বপ্ন এবং বিচূর্ণ আকাক্ষার রূপায়ণ সেগুলোতে অনিবার্য হয়ে উঠেছে। আপাতদৃষ্টিতে পারিপার্শ্বিকের বহির্তরঙ্গে উন্মুখ হয়ে ওঠে এসব কাহিনি। কিন্তু আফসানা বেগম কখনো কখনো আলো ফেলেন কাহিনির গভীরতলবর্তী আবেগগুচ্ছে। ফলে প্রচল ঘটনারাশি অথবা প্রাত্যহিক সংবাদপুঞ্জও তাঁর গল্পে রূপায়িত হয় বাস্তবাতিরিক্ত সংবেদের দ্যোতনায়। জীবনের সামূহিক লাঞ্ছনা, বিষাদ ও আনন্দ তিনি তুলে আনেন আকস্মিকতায়, খণ্ড খণ্ড সংলাপে, আবার কখনো আত্মকথনের চেতনা-প্রতিভাসে। তাতে উজ্জ্বলিত হয়ে থাকে বঞ্চিত ও নিষ্পেষিতদের প্রতি মানবিক বোধ।
ভাষার সারল্যে গ্রন্থভুক্ত কাহিনিগুলো সাবলীল, স্বতঃস্ফূর্ত। নিছক নন্দনতত্ত্বের কলাপ্রকৌশলে লেখক বাড়তি মনোনিবেশ করেননি। তবে কোনো কোনো গল্পের পটভূমি-পরিপ্রেক্ষিত এবং কথাবয়নের অন্তর্বাসনা সেই রূপাবয়বের সংকেত দেয়।