বাংলাদেশের ছােটগল্প কি ক্রমশ নতুনভাবে জীবিত হয়ে উঠছে? এ কথা মনে হচ্ছে সম্প্রতি বিশেষত নতুন প্রজন্মের হাতে ছােটগল্পের বিস্তার ও বৈচিত্র্য দেখে। বাঙালি গাল্পিক জাতি: গল্প বলা ও শােনার সংস্কৃতিতে ঋদ্ধ। কাব্যে-গদ্যে-গাথায়, শীতে-বর্ষায়, উৎসবে-পার্বণে গল্প বলে ও শুনেই সে বাঁচে। এই বঙ্গজুড়ে এত ঘটনা-দুর্ঘটনা, এত মারী-ঝঞা-শােকরক্তাক্ততা, গল্পেরও তাে শেষ নেই। তাই সুখে-দুখে, শশাকে-আনন্দে গল্পের ভিতর দিয়ে সে বলে চলে ব্যক্তিগত ও জাতীয় গাথা, যা সুপ্রাচীন যুগ থেকে বহমান। এ ঐতিহ্যকে সঙ্গে নিয়েই নিজের গল্পযাত্রা শুরু করলেন মুস্তাইন সুজাত। আমাদের গ্রামজীবনে এই সেদিনও শিশুদের জন্য ছিল অনেক গল্পরজনী, তা যে আরব্যরজনীর চেয়ে কম আকর্ষণীয় ছিল না, টের পাই লেখকের জবানিতেই: ‘বুবুর গল্পরথে চড়ে কোনাে দিন পাড়ি দিতাম পৌরাণিক যুগে, রূপকথার রাজ্যে, আবার কোনাে দিন পাড়ি দিতাম স্বাধীনতা যুদ্ধের ভয়াবহ সময়ে। আর এভাবেই ঐতিহ্যিক গল্পধারা আর জাতির মহত্তম ত্যাগ মুক্তিযুদ্ধকে জীবন্ত করে তােলেন লেখক তার মৃত্যুর করতালি’ গল্পে। কিন্তু এ তার একটি দিক। বইয়ের এগারটি গল্পে বিষয় ও ভাষায় জীবনের এত সব দিক স্পর্শ করেছেন, তার বয়স অনুপাতে বিস্ময়কর মনে হয়। জীবন, যৌনতা, রাজনীতি, হত্যা, যুদ্ধ, স্বপ্ন, স্মৃতি, সাম্প্রদায়িকতা, লােকবিশ্বাস, প্রেম, দাম্পত্যসহ বহু বিষয় এমন এক অন্তরঙ্গ ভাষায় লিখেছেন, মনে হয় গল্পের চেয়েও বাস্তব। অটুট থাকুক তার কলম-দাম্পত্য।
মুস্তাইন সুজাত
জন্ম ২৯ নভেম্বর, হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানার গােবিন্দপুর গ্রামে।। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর করেছেন যথাক্রমে ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব টেকনােলজি, ভারত ও ইউনিভার্সিটি অব মালায়া, মালয়েশিয়া। পেশা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা।