ময়ূরাক্ষী (হিমু সিরিজের প্রথম বই) (হার্ডকভার)
বই: ময়ূরাক্ষী। লেখক: হুমায়ূন আহমেদ। হলুদ পাঞ্জাবী আর নীল শাড়ি পড়ে ময়ূরাক্ষী উপন্যাসের মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যে আগমন ঘটে হিমু এবং রূপার। হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট অমর চরিত্র এই হিমু-রূপা। যে কোন জটিল সমস্যার সহজ সমাধান এবং পরোপকারী কিন্তু রহস্যময় চরিত্রের বর্ণনায় ঘেরা হিমু্। জন্মের পর যেমন কোন শিশুকে নাম-ধাম, বংশপরিচয় দেওয়া হয় তেমনি হিমুর বর্ণনায় বর্ণিত এই উপন্যাস। বইটিতে দেখা মেলে বাদলের। বাদল, হিমুর একনিষ্ঠ ভক্ত। হিমুর খালার একমাত্র ছেলে। সে হিমু হতে চায়। পরিচয় মেলে হিমুর খালা-খালুর। এছাড়াও হিমুর বাবার এক অদ্ভুত পরিচয় পাওয়া যায় বইয়ে। হিমুকে তিনি মহাপুরুষ বানাতে চেয়েছিলেন। এজন্য সে হিমুর মা কেও হত্যা করে। কিন্তু মহাপুরুষ হওয়ার আগেই হিমুর বাবা মারা যায়।
হুমায়ুন আহমেদের অমর সৃষ্টি "হিমু"। জন্মের পর হিমুর মা মারা যায়। তারও কিছুদিন পর মারা যায় তাঁর বাবা। মৃত্যুর আগে হিমুর বাবা তাঁকে বেশ কিছু উপদেশ দিয়ে যান। হিমুর বাবা চেয়েছিলেন হিমুকে মহাপুরুষ বানাতে। তাঁর জন্য সব বন্দোবস্ত করে যান তিনি। হিমুর এই মহাপুরুষ হয়ে ওঠা এবং হিমুর পরিচয়ের প্রাথমিকতা নিয়েই ময়ূরাক্ষী বইটি রচিত হয়েছে।
ময়ূরাক্ষী হিমুকে নিয়ে হুমায়ূন আহমদের প্রথম বই। “ময়ূরাক্ষী” দিয়েই হুমায়ুন আহমেদ হিমু কে আমাদের সামনে এনেছেন।”এ্যাই ছেলে এ্যাই ” বাক্যটি দিয়ে শুরু হওয়া বইটিতে পাঠক হিমুর সাথে পরিচিত হয়। জাস্টিস সাহেবের স্ত্রী আর মেয়ের সাথে ভুলের কারণে হিমু কে থানায় যেতে হয়। তখন থেকে ছেলেটির কথা বলা পাঠকের একটা সুক্ষ আকর্ষন দখল করে নেয়। তার কিছু পর হিমু পরিচয় করিয়ে দেয় তার ময়ূরাক্ষী নদীর সাথে।এর ইতিহাস পাঠক অজান্তে হিমুর মাধ্যমে কল্পনায় পেয়ে যাবে। হিমুর সাথে সাথে পাঠকের পরিচয় হয় তার গন্ডির সাথে। সেখানে তার ফুফাত ভাই বাদল আর ফুফাতো বোন রিনকি হিমুকে প্রচন্ড ভালবাসে। ফুপার সাথে হিমুর আলাপ সালাপ পাঠকদের অবাক করে দেবে। এর পরেই আমরা একটু একটু করে হিমু কে চিনবো। তার শৈশব থেকে শুরু করে তার বড় হওয়া দেখবো। তার বাবার মহাপুরুষ বানানোর প্রক্রিয়া আমাদের একটু হলেও অন্য অনুভূতি দিবে। এর পর পাবো অসম্ভব রুপবতী রুপাকে। তাকে কি হিমু ভালবাসে? কি জানি… আমাদের অবাক করে দেবে হিমুর হাটা। “আমি সারাদিন হাঁটি। আমার পথ শেষ হয় না। গন্তব্যহীন যে যাত্রা তার কোনো শেষ থাকার কথাও নয়…”। ময়ূরাক্ষী উপন্যাস সৃষ্টির সাথে হিমুর পথ চলা শুরু , কিন্তু পাঠকের অন্ত্যহীন পথের সঙ্গী সে । সেই পথ চলা কখনো আনন্দের, কখনো ভালোবাসার, কখনো অনেক দূঃখময়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সাহিত্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করলেন হুমায়ুন আহমেদ। কালজয়ী এই ঔপন্যাসিকের সৃষ্ট চরিত্র হিমু , ওরফে হিমালয়। ময়ুরাক্ষী দিয়ে তার প্রবেশ। গল্পের মূল চরিত্র হিমু। তার সাথে পরিচিত হতে পাঠকের মোটেও খারাপ লাগবে না। উপন্যাসের পুরো ফোকাস যে হিমু , পাঠকের তা বুঝতে বড় জোর মিনিট খানেক লাগবে। এই হিমু আপনাকে আস্তে আস্তে করে নিজের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। আপনি অবাক হবেন কি করে, আপনার সকল মনযোগ এই ছেলেটা নিয়ে গেছে। যখন টের পাবেন ততক্ষনে দেরি হয়ে গেছে। কেন না ততক্ষনে আপনি আাসক্ত। হুমায়ুন আহমেদ এমন একটা চরিত্র তৈরি করেছেন, যাতে আমাদের অপুরনীয় ইচ্ছা গুলো প্রকাশ পায়। হিমু ভক্ত হতে তখন আর দেরি হয় না। বহুদিন পরেও এই বই ছুয়ে মনে হলো আমারও একটা নদীর দরকার ছিলো যেখানে কিছু টা সময় আমি পার করতে পারতাম। তার অগোছালো কাজ গুলোও আকর্ষনীয় মনে হবে। বইয়ের শেষ পাতা গুলো আরো বেশি আচ্ছন্ন করে দিবে, যেখানে সে তার নদীর তীরে অন্য কাউকে হাটতে দিয়েছে। রূপা কত টা পাঠিকাদের আকর্ষন করতে পেরেছে জানি না। তবে পাঠক দের পুরো মনোযোগ নিয়ে গেছে। তারাও রূপার মতো কাউকে চায়। যে তার জন্য অপেক্ষা করবে কিন্তু সে হিমুর মতো ফাকি দিবে। কেন না ভালবাসার মানুষ এর কাছে বেশি যেতে নেই। তারা অপেক্ষা করুক… #বইবাজার_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_মার্চ_২০১৯
নিসন্দেহে ভালো একটি বই। আমরা যে হিমু সিরিজ দেখি এই ‘ময়ূরাক্ষী’ বই দিয়ে তার আত্নপ্রকাশ ঘটে।আমাদের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদ যে জাদুকরী ক্ষমতা তৈরী করেছিলেন, তার মধ্যে তার সৃষ্টি চরিত্র 'হিমু' সাহিত্যানুরাগীদের নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছিলো। ‘ময়ূরাক্ষী’ দিয়েই ম্যাজিশিয়ান হিমুর পথচলা শুরু হয়। একজন পাঠকের ইচ্ছাগুলো হুমায়ূন আহমেদ খুব যত্নের সাথে হিমুর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। "ময়ূরাক্ষী" দিয়ে যে হিমুর যাত্রা, তা পাঠককে আমৃত্যু অন্ত্যহীন পথে্র সঙ্গী করে নিয়ে বেড়াবে বলে আমার বিশ্বাস।