বাংলাদেশ সাগর উপকূলবর্তী একটি পলিমাটির দেশ। বহু বছর আগে, এই খ্রিষ্টজন্মেরও আগে কোল, মুণ্ডা, দ্রাবিড় এমনি আরাে অনেক ছােট ছােট নৃগােষ্ঠী বাস করত। পলিমাটির দেশ বলে এ-অঞ্চল ছিল বনজঙ্গলে আবৃত। আর সেই সব জঙ্গলে বাস করত হিংস্র সব জীবজন্তু। বাঘ, সিংহ, সাপ আরাে সব বন্য প্রাণী। এই সব বনজঙ্গলের আশেপাশে, নদীর ধারে বাস করত মানুষ। বনজঙ্গল থেকে প্রায়ই বন্যসিংহ বাঘ-সিংহ লােকালয়ে এসে মানুষ খেয়ে ফেলত। বনজঙ্গলের ভেতর দিয়ে ছিল মানুষের চলাচলের রাস্তা সুতরাং চলাচলের সময়ও অনেকে বাঘের পেটে চলে যেত। মানে বাঘ খেয়ে ফেলত মানুষকে। তাই বন্য হিংস্র প্রাণীদের সাথে লড়াই করেই তখনকার মানুষকে বেঁচে থাকতে হতাে। তবে বনেজঙ্গলে তাে শুধু এইসব হিংস্র বাঘভালুক-সিংহই বাস করত না। ওদের সাথে ছিল হরিণ, বুনাে হাঁস, আরাে কত পাখ-পাখালি।তখনকার দিনে বাংলাদেশের বর্তমানে বগুড়া জেলার কাছে একটি জায়গার নাম মহাস্থানগড়। এই জায়গাটি ছিল খুবই উন্নত। সে-সময় এর নাম ছিল পুণ্ড্রনগর বা পুণ্ড্রবর্ধন। | বর্তমান বগুড়া শহর থেকে সাত মাইল উত্তরে করতােয়া নদীর দক্ষিণপূর্ব তীরে প্রায় বিশ-ত্রিশ কিলােমিটার এলাকা জুড়ে উঁচু লালমাটির ঢিপি পাহাড়ি এলাকা এই মহাস্থানগড়। যিশু খ্রিষ্টের জন্মের আগে থেকে শুরু করে প্রায় দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত এই পুণ্ড্রনগরে এক উন্নত সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। তার নির্দশনা যেমন ৩ড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এখনাে সারা মহাস্থানগড় এলাকা জুড়ে তেমনি এইসব ঐতিহাসিক নিদর্শনকে ঘিরে জন্ম হয়েছে অনেক কল্প-কাহিনি-কিচ্ছা। এইসব কিচ্ছা কাহিনি রূপকথার চেয়ে কোনাে অংশে কম নয়। এগুলাে মহাস্থানের কিংবদন্তি। এই বইতে আমি মহাস্থানের পাঁচটি কিংবদন্তির কিচ্ছা বলব।
সাহিদা বেগম
সাহিদা বেগম ১৯৫৫ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের বিনারচর। গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা- মরহুম আলহাজ্ব আনােয়ার আলী ভূঞা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। মা আলহাজ্ব হাসনা হেনা বেগম গৃহিণী। গবেষক প্রাবন্ধিক ও আইনজীবী সাহিদা বেগম ১৯৭০ সালে গাইবান্ধা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৭৩ সালে সিদ্ধেশ্বরী মহিলা মহাবিদ্যালয় ঢাকা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্মান (বাংলা সাহিত্য) ১৯৭৫ এবং ১৯৭৬ সালে লাভ করেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। ১৯৮৪ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেন। এন এন বি ডিগ্রি। কর্মজীবন : ১৯৮৫ সালে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ঢাকা বারে যােগ দিয়ে। ১৯৮৮ সালে যােগ দেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বারে। অদ্যবধি আইন পেশায় নিয়ােজিত আছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের সহকারী এটনী জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
‘স্বদেশ, ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধ সাহিদা বেগম এর রচনার মূল বিষয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তাঁর। রচনার একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে। এ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ১৬টি গ্রন্থসহ ৬৯টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম এই যুদ্ধে যুদ্ধে নয় মাস ১৯৮৪ সালে বছর ব্যাপি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।