মহাপ্রলয়ের প্রান্তর (হার্ডকভার)
#চরিত্র_বিশ্লেষণ চরিত্রঃ ফালাক ইলহামান বইঃ মহাপ্রলয়ের প্রান্তর লেখকঃ জিমি তানহাব ফালাক ইলহামান, ‘মহাপ্রলয়ের প্রান্তর’ উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র, জগত বিখ্যাত বীর মেহরাভ তাফসীরের প্রিয়তমা। তবে সেটিই তার একমাত্র পরিচয় নয় বরং তাকে শুধু মেহরাভ তাফসীরের প্রিয়তমা হিসেবে পরিচয় করালে তার প্রতি সুবিচার করা হবে না। সর্বোপরি ফালাক একজন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সুন্দরী, সাহসী, বুদ্ধিমতী, জ্ঞানপিপাসু, সুচতুর, উদার একজন নারী। ফালাকের সৌন্দর্যের কিছুটা বুঝা যেতে পারে এই অংশটুকু থেকে, “...ওই পবিত্র সৌন্দর্য সব ভুলিয়ে দিচ্ছে তাকে। যে পুষ্পিত আলোকময় সৌন্দর্য বিষণ্ণ আত্নাকেও প্রশান্ত করে দেয়। চিত্তহারি কুসুমকোমল অঙ্গের ত্বকটা যেন তার রেশমের থেকেও মসৃণ। গলায়-বুকে বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো মতির মতো চমকাচ্ছে। গোলাপের পাপড়ির ন্যায় ঠোটযুগলের নিচে কালো তিলকটা তার মুখমণ্ডলের দ্যুতি বাড়িয়ে দিচ্ছে দ্বিগুণ...”। যদিও ফালাকের এই রূপ বর্ণনা করা হয়েছে ফ্রাজেনের যুবরাজ সানহাব এব্রাহামের দৃষ্টিকোণ থেকে। একইসাথে, ফালাক একজন দক্ষ যোদ্ধাও। হতেই হবে কারণ সে জগৎবিখ্যাত বীর মেহরাভ তাফসীরের কাছ থেকে শিখেছে, তার সাথে অনুশীলন করেছে। যুদ্ধের ময়দানে ফালাক নিজেকে আলাদাভাবে চেনাতে সক্ষম। তার অস্ত্রচালনা দেখে শত্রুরাজ্যের অধিপতিও বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে থাকে। ফালাকের বীরত্বের কথা প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। মাত্র পনেরো বছর বয়সে প্রথম যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে আয়াসানের সেনাপতিকে হত্যা করেছিলো। তবে, ফালাককে ভালো লাগার প্রধান কারণ তার জ্ঞানপিপাসা, কৌতুহল নিবারণের বাসনা। শুধুমাত্র কৌতুহল নিবারণের জন্য ইবলিশের কথা শুনে ফালাক দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে পারে, সুপ্রাচীণ এক তৃষ্ণার্ত বৃক্ষের তৃষ্ণা মেটাতে পারে। ইবনে সিনার প্রিয় ছাত্রী সে। তার কাছ থেকে ফালাক জ্যোতির্বিজ্ঞান সহ আরো নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে। ফালাককে যখন ফ্রাজেনের যুবরাজ সানহাব এব্রাহাম যুদ্ধবন্দী করে রেখেছিল, ইবনে সিনা ফালাককে দেখতে আসেন। দেখা করে চলে যাওয়ার সময় সানহাব সিনাকে আপ্যায়ন করতে চাইলে সিনা ফ্রাজেনের যুবরাজের নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে জানান, যেখানে তার মেয়ে কারাগারে বন্দী সেখানে তিনি রাজকীয় আপ্যায়ন নিতে পারবেন না। ফালাকের আছে এক অদ্ভুত উদারতা। যুদ্ধবন্দী সানহাব এব্রাহামকে কারাগারের জানালা দিয়ে আপেল ছুড়ে দিতে সে দ্বিধা করে না। আবার নিজে যুদ্ধবন্দী হিসেবে, যখন সানহাব এব্রাহামের সাথে, মেহরাভ তাফসীরের সমাধিতে, তাফসীরের তরবারি গাথতে আসে তখন নিজের লোকদের বিপক্ষে তলোয়ার তুলে ধরতেও সে দ্বিধা করে না। যদিও এই কাজটা ফালাক পুরোপুরি নিজের উদারতা থেকে করেনি, বরং তার প্রতিশোধের পরিকল্পনা যেন ব্যাহত না হয় সেটাও একটা কারণ। হ্যা প্রতিশোধ। সানহাব এব্রাহাম যখন ফালাকের প্রিয়তম মেহরাভ তাফসীরকে হত্যা করে তখন ফালাক প্রতিজ্ঞা করে প্রিয়তম হত্যার প্রতিশোধ সে নিজ হাতে কড়ায়-গণ্ডায় নিবে। যদিও কড়ায়-গণ্ডায় নিতে পারে না, একজন হাত ফসকে আগেই মারা যায়। তবে প্রতিশোধের বাকি কাজটা সে কড়ায়গণ্ডায় নিজ হাতেই সম্পন্ন করে। দাঁতে দাঁত চেপে, হৃদয়ের সকল টানকে উপেক্ষা করে ফালাক তার প্রতিজ্ঞা পালন করে। এই পর্যন্ত এসে অবশ্য আমি আর নিশ্চিত হতে পারছি না কেন ফালাককে ভালো লেগেছে। তবে ভালো লেগেছে, এটাই মূল বিষয়।