ভূমিকা জীবনীকার এবং ইতিহাসের রূপকার হিসেবে খ্যাতিমান সাহিত্যিক আনিস সিদ্দিকী বাংলা সাহিত্যে একটি বিশিষ্ট আসন দখল করে রেখেছেন। তাঁর বর্তমান গ্রন্থ ‘মহাযুদ্ধের নায়ক হিটলার’ বাংলা সাহিত্যে জীবনী গ্রন্থরাজির মধ্যে একটি উল্লেখগ্য সংযোজন।
হিটলার বিশ্বে রণদানব হিসেবে চিত্রিত হয়েছন, হিটলার বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখেছেন, হিটলার আগ্রাসন নীতির হোতা, এ ধরনের নানা অভিযোগ হিটলারের বিরুদ্ধে আছে; কিন্তু হিটলার যে বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন, এ কথাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রথম মহাযুদ্ধের পর জার্মানী যে অবমাননার বোঝা ঘাড়ে নিয়ে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত দুঃসহ অপমান সহ্য ক’রে কাল কাটিয়েছে; তার প্রতিশোধ নেয়ার উদগ্র বাসনা প্রকৃতপক্ষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গোড়াপত্তন ঘটিয়েছিল। এই পরিস্থিতির কার্যকারণ পরস্পরা বিশ্লেষণ করে লেখক যে চিত্র পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন, তা যেমন আকর্ষনীয় তেমনি তথ্যবহুল।
হিটলার জাতীয় সমাজতান্ত্রী, তাই জাতীয় জাগৃতিই তাঁর লক্ষ্য ছিল; আর সে জন্য জার্মান জাতিকে এক শক্তিমান জাতি হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু কূটনীতিতে হিটলার সব সময় মার খেয়েছেন। পৃথিবীব্যাপী যুদ্ধের সম্প্রসারণ, রাশিয়ার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ইটালীর ব্যর্থতা ও তার অহেতুক অহমিকা হিটলারের পরাজয়ের কারণ। এসব সংঘাতময় ঘটনার ঐতিহাসিক চিত্র পাঠকের চোখের সামনে তুলে ধরেছেন আনিস সিদ্দিকী। লেখকের চরিত্র চিত্রণ ও ঘটনা ব্যাখ্যানের মুনশিয়ানা সকল শ্রেণীর পাঠককে তন্ময় করে রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। আমি স্নেহভাজন আনিস সিদ্দিকীকে তাঁর কৃতিত্বের জন্য মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
মোহাম্মদ মোদাব্বের গজনবী রোড, ঢাকা ১৪মে, ১৯৭৯
আনিস সিদ্দিকী
সুসাহিত্যিক আনিস সিদ্দিকী ১৯৩৪ সালের ৬ এপ্রিল শুক্রবার বর্তমান সাতক্ষীরা জেলার দরগাহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৌলভী শেখ আব্দুল আজিজ, মাতা খােদেজা খাতুন। গ্রামের মাদ্রাসার প্রাথমিক পাঠ গ্রহণ করে গ্রামেতেই বোর্ড ফ্রি প্রাইমারী স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৭৪ সালে ৭ম শ্রেণীতে ভর্তি হন। খ্যাতনামা বৈজ্ঞানিক স্যার বি.সি, রাজ প্রতিষ্ঠিত আর কে বিকে এইচ সি ইনস্টিটিউশনে। এই স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন ১৯৫১ সালে। বি এন কলেজ দৌলতপর খুলনা থেকে শিক্ষা জীবন শেষ করে শিক্ষক হিসেবে যােগ দেন বরিশাল জিলা স্কুলে। বদলি হয়ে খুলনা জিলা স্কুল আসেন সেখান থেকে ১৯৬৭ সালে যােগদান করেন ঢাকার গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরী হাইস্কুলে। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এই স্কুলেই কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৫ সালে ২৫ ডিসেম্বর তার অকাল মৃত্যু হয়।