বাস্তবতার নিকষ আঁধারে দাঁড়িয়ে এক নারী দেখেছে জীবনকে। অনুভব করেছে নতুন ভাবে। উপলব্ধি করেছে, জটিল ও বন্ধুর দীর্ঘ এক যাত্রাপথের নাম জীবন।
অতঃপর নিজেকে নির্মাণে ব্রতী হয়েছে সে। নির্মাণের এ পথটি কুসুমাস্তীর্ণ তো নয়ই, বরং কণ্টকাকীর্ণ। পথের বাঁকে বাঁকে সংগ্রাম, ত্যাগ ও তিতিক্ষা। কোনো ছায়াবৃক্ষ নেই এ পথে। হাজারো পথিক, অথচ একান্ত সঙ্গী নেই কেউ।
জীবনপথের এ যাত্রাই 'মহাযাত্রা'।
ভেঙে গুঁড়িয়ে যাওয়ার পর নবসৃষ্টির গল্প 'মহাযাত্রা'। নিভু নিভু প্রদীপশিখার জ্বলে ওঠার গল্প। 'মহাযাত্রা' ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো এক নারীর জেগে ওঠার গল্প।
মৌরি মরিয়ম
লেখালেখির ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হওয়া নিয়ে মৌরি মরিয়ম বলেন, মানুষের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়, আমারও হয়েছে। আমি যখন প্রথমে বই পাবলিশ করতে চাচ্ছিলাম, তখন কোনো প্রকাশক পাইনি। যেহেতু আমি নতুন ছিলাম, সেহেতু কেউই আমার বই বের করতে চাননি। ১ বছর পরে আমি সুযোগ পেয়েছি। এছাড়া অন্য যে বাধাগুলো সময় ও লাইফের বিভিন্ন বিষয় মেইনটেইন করতে হয়, বিশেষ করে চাকরি ও লেখালেখি একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়া কঠিন। সেকারণেই আমি চাকরি ছেড়ে লেখালেখি করছি। এর বাইরে বাকি বাধাগুলোকে আমি বাধা মনে করি না।
১৯৯১ সালের ২৫ মে বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় মৌরি মরিয়ম জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমান সময়ে তরুণ লেখকদের একজন মৌরি মরিয়ম। তার লেখায় মানবিক সম্পর্ক, প্রেম, মান-অভিমান, ভ্রমণ, যাপিত জীবন সমকালের প্রেক্ষাপটে এসব বিষয় মূর্ত হয়ে ওঠে। লেখালেখি নিজের জীবনের একটি অংশ হয়ে গিয়েছে মৌরি মরিয়মের। বর্তমান বাঙালি লেখক সমাজে জনপ্রিয় এক নাম মৌরি মরিয়ম। তার বাবা মরহুম আজিজুল হক এবং মা মনজু বেগম। তিনি বেড়ে উঠেছেন রাজধানী ঢাকার শহরঞ্চলে। ধানমন্ডি গার্লস স্কুল থেকে ২০০৯ সালে মাধ্যমিক এবং বদরুন্নেসা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ২০১১ সালে। ২০১৫ সালে ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা বিভাগে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেন। শৈশবকাল থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে মৌরির। লেখাপড়ার পাশাপাশি নিয়মিত গল্পের বই পড়তেন তিনি। বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ তার। তার লেখক প্রতিভা জাগ্রত হয় স্কুলের ম্যাগাজিনে গল্প-কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। সেই থেকেই লেখক সত্ত্বাকে জিইয়ে রেখেছেন মৌরি। ছাত্রজীবনে লেখক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে রচনা করেছেন ৪-৫টি উপন্যাস। তিনি আত্মপ্রকাশ করেন ২০১৮ সালে। মৌরি মরিয়ম এর উপন্যাস ‘প্রেমাতাল’ ২০১৮ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয়। ঠিক এর পরের বছর ২০১৯ সালের বইমেলায় তিনি উপহার দেন তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘অভিমানিনী’। ‘তোমায় হৃদমাঝারে রাখব’ তার প্রকাশিত তৃতীয় উপন্যাস। এরপর মৌরি মরিয়ম এর বই সমগ্র এর মধ্যে আরও আছে ‘সুখী বিবাহিত ব্যাচেলর’। খুব অল্প সময়ে মাত্র ৪টি উপন্যাস দিয়ে তিনি পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। সম্প্রতি ‘ফানুস’ উপন্যাসের জন্য নবীন সাহিত্যশ্রেণিতে ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২২’ অর্জন করলেন মৌরি মরিয়ম। এটি তাঁর প্রথম পুরস্কার। পুরস্কার পাওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছি ফানুস বইটির জন্য। বইটির পেছনের গল্প বলতে গেলে আমি সব গল্প যেভাবে লিখি এটিও সেভাবেই লিখেছি। প্রথমত আমার কাছে কিছু একটা থিম বা ব্লগ কিংবা ভিডিও আসে। সেখান থেকেই পুরো গল্পটি সাজাই। গল্পটি লিখেছি ২০১৭ সালে, পাবলিশড হয় ২০২১ সালে। ’নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে মৌরি মরিয়ম বলেন, ‘পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি অবশ্যই ভালো। যেকোনো সম্মাননাই কাজের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। এই পুরস্কারটা আমার জন্য আরও বেশি স্পেশাল কারণ এটি হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার। হুমায়ূন আহমেদ আমার মায়ের সবচেয়ে প্রিয় লেখক। যার নামটির প্রতিই আমার অনেক দুর্বলতা। তার নামের সঙ্গে পুরস্কারটি জড়িয়ে তাই এটি আমার কাছে অনেক বেশি স্পেশাল। মৌরি মরিয়ম এর বই সমূহ পাঠককূল আগ্রহভরে পড়ে। শত ব্যস্ততার মধ্যেও লেখালেখির জন্য সময় তিনি বের করেই নেন, কেননা বই লেখা মৌরি মরিয়মের নেশা। সারাজীবন তিনি লেখালেখির মধ্যেই থাকতে চান।
মৌরি মরিয়ম এর বই
মহাযাত্রা, তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, অভিমানিনী, সুখী বিবাহিত ব্যাচেলর, হাওয়াই মিঠাই, অলিন্দ অনলে, ফানুস।