মাইন্ড রিডার (হার্ডকভার)
📕 বইঃ মাইন্ড রিডার, লিওর সুশার্ড 📑 একটু ভাবুনতো যদি এমন হতো, আপনি আপনার মনের শক্তি দিয়ে অন্যের মনের কথা পড়তে পারেন বা মাইন্ড রিড করতে পারেন ও চিন্তাচেতনাকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখেন। যদি না শুনেই বলে দেয়া যেত কি আছে তার মনে?একটু ভেবেই দেখুননা বেপারটা কেমন হতো। হ্যা এটাও সম্ভব। আমাদের মস্তিষ্কে রয়েছে কিছু মিরর নিউরনস, যেগুলো আমাদের সামনে করা অন্য মানুষের কার্যক্রমকে আমাদের মস্তিষ্ক রিড করতে পারে। প্রতিটি মানুষের-ই চিন্তা শক্তি গ্রহণ এবং প্রেরণের জন্য নিজের মধ্যে একটি ট্রান্সমিটার রয়েছে। তবে কথা হলো কতজন মানুষ এগুলোর ব্যাবহার করছে। আমরা সকলে যে যার মতো করে আমাদের চিন্তা গুলোকে ব্যাবহার করি। আজকে পড়ছিলাম বিশ্বখ্যাত এন্টারটেইনার ও মেন্টালিস্ট লিওর সুশার্ড এর লেখা "মাইন্ড রিডার" বইটি। অনুবাদঃ অনীশ দাস অপু। প্রকাশকঃ মুক্তদেশ। মাইন্ড রিডার বইয়ের লেখক লিওর সুশার্ড একজন মেন্টালিস্ট। তার বইটি আপনার চিন্তা করার ধারণাটাই বদলে দিতে পারে। লিওর সুশার্ড মেন্টালিস্ট হিসেবে দুনিয়ার বহু দেশ ঘুরে বেরিয়েছেন। স্টেজ পারফরম্যান্স করতে গিয়ে নানান বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। লেখক তার নিজের জীবনের সেই অভিজ্ঞতা গুলোকে তিনি এই বইয়ে তুলে ধরেছেন। মানুষ স্বভাবতই একজন আরেকজনের আবেগকে বুঝতে চায় বা রিড করতে চায়। আর তাই মানুষ অন্য কারো আবেগীয় অনুভূতির ভেতরে এমনিতেই চলে যায় প্রতিনিয়ত। এটা তৈরি করা পরিস্থিতি নয়, বরং সয়ংক্রিয় ব্যাপার। আর তাই মানুষ চাক বা না চাক, একজন আরেকজনের মনকে এমনিতেই বুঝে ফেলে। আর এক্ষেত্রে তাকে সাহায্য করে মিরর নিউরন বা আয়না স্নায়ুগুলো। আমরা সবাই জানি আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় রয়েছে। দেখা, গন্ধ নেয়া, স্বাদ গ্রহণ করা, স্পর্শ করা এবং শোনা। আমাদের এ ইন্দ্রিয়গুলো আমাদের চারপাশের পৃথিবীকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। আমরা কিভাবে চিন্তা করি, পরস্পরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করি, সেটা মৌখিকভাবে হোক বা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমেই হোক, Neurolinguistic Programme এর বিশ্লেষণ উদাহরণ হিসেবে বলি, "আমি যদি হাত তুলি আপনাকে ঘুসি মারার জন্য, স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনি আপনার মুখ ডেকে ফেলবেন"। আমরা জীবনে যা-ই করিনা কেনো, সবকিছুর পেছনেই একটা উদ্দেশ্য থাকে। আমরা যা-ই করি তাতে একজনের প্রতি অপরজনের একটা সাড়া দেয়ার বিষয় থাকে। আপনার বডি ল্যাংগুয়েজ, আপনার কথা, ভাবভঙ্গি, আপনার গলার টোন এই গুলো হলে প্ররোচনার সাইকোলজিক্যাল দিক। মানুষকে আসলে খুব সহজেই প্ররোচিত করা যায়। আমরা সবসময়-ই কারো না কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়েই চলেছি। কাউকে প্ররোচিত করার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অপর ব্যক্তিটির সাথে ইমোশনাল কানেকশন বা আবেগপূর্ণ যোগাযোগ স্থাপন করা। আমরা যদি এই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি তাহলে অপর ব্যক্তিটি আমাদেরকে আরও ভালো করে লক্ষ্য করবে এবং আমরা তাকে প্ররোচিত করতে পারবো। আবেগপূর্ণ যোগাযোগকে ধরে নিন কারো সাথে কমিউনিকেট করার একটি সহজ পথ। যেকোনো বিষয়ে লোকে বেশি করে সাড়া দেয় যখন তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলা হয়। আপনি যদি কাউকে প্রশ্ন করেন এবং সে সত্যি জবাবটাই দেয়, তার চোখ ডানে ও ওপরের দিকে উঠে যাবে। কারণ তখন সে তার জীবনে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা নিয়ে ভাববে। আর বামে, ওপরে চোখ চলে যাওয়া মানে সে মিথ্যা কথা বলছে, আর মনে মনে কাল্পনিক কোনো ছবি দেখছে। আপনি যত বেশি বিষয়টি লক্ষ্য করবেন, ততবেশি অপর পাশের ব্যক্তিটির মন পড়তে পারবেন। আপনি যদি কাউকে কিছু অনুরোধ করেন এবং তাতে "কারণ" শব্দটি ব্যবহার করেন, আপনার অনুরোধ রক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মানুষের আচরণের একটি বহুল জানা নীতি হলো যদি আমরা কাউকে আমাদের একটি উপকার করতে বলি তাহলে সেটা সফল হবে যদি এর পেছনে একটি কারণ খাড়া করতে পারি। লোকে যা করে তার পিছনে কারণ দেখতে চায়। আপনি যে মানুষটির সাথে কথা বলছেন তাকে কখনো ন বলার সুযোগ দেবেন না- যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি নিজে শব্দটি শুনতে চাইছেন। যদি কাউকে প্রশ্ন করেনঃ তুমি কি সিনেমা দেখতে যাবে? এ প্রশ্ন করা হলে তার জবাব নেতিবাচক আসতে পারে। আর যদি এমনভাবে বলা যায়ঃ সিনেমা দেখার জন্য ভাল দিন কোনটি, বুধবার নাকি বৃহস্পতিবার? তখন কথা চলতে থাকবে ইভেন সিনেমা দেখার ডেট ও পেয়ে যেতে পারেন। আমরা সকলেই জানি কিছু লোক আছে যারা নেতিবাচক পরিবেশের প্রতি আকৃষ্ট থাকে এবং তদের জীবনে নানান মন্দ ঘটনা ঘটে। আরেকদল আবার যেনো থাকে সৌভাগ্যের বরপুত্র, তারা সর্বদা সুখে থাকে। এই মানুষগুলোর মাইন্ডসেট নিবে ভাবুন। যে লোকটা দুর্ভাগা, সে কি গোমড়ামুখো এবং হতাশ? আর যে লোকটি সৌভাগ্যবান, সে কি সুখী এবং দয়ালু? এখন সহজেই বলা যায় ১ম জন গোমড়ামুখো এবং ২য় জন সুখী। এখানে একজন সবসময় নেতিবাচক চিন্তা করেছে এবং অপরজন ভেবেছে ইতিবাচক ভাবনা। ফলে একজন দুর্ভাগ্যকে ডেকে এনেছে জীবনে, অপরজন সৌভাগ্য। আপনার ভাবনার মধ্যে নির্ভর করবে আপনার জীবনে কি ঘঠবে। মাইন্ড রিডার বইয়ের চমৎকার কয়েকটি লেখাঃ * মনের আশ্চর্য ক্ষমতা। * প্ররোচিত করার ক্ষমতা। * আপনার মনকে গিয়ারে রাখুন। * বডি ল্যাংগুয়েজ। * ইতিবাচক শক্তিকে ব্যাবহার। * ইনটুইশন সাইকোলজিক্যাল। *নেতিবাচক থেকে ইতিবাচকে রুপ দেওয়া। * ভাবনার সাথে সৃষ্টিশীল হয়ে উঠুন। বিঃদ্রঃ এই বইটির টাইটেল ও ছবি দেখে অনেকে ভাবতে পারেন, এই বই পড়ার মাধ্যমে একজন পুরোপুরি মাইন্ড রিডার হয়ে যাবেন। এই ভাবনা থেকে যদি বইটি সংগ্রহ করতে ইচ্ছা পোষণ করেন তাহলে আমি বলবো বইটি আপনার ধারনার কিছুটা নেগেটিভ সাইটে আছে। বইটিতে কোনো জাদু বিদ্যা বা সহজ কৌশল বাতলে দেওয়ার মতো কোনো উক্তি দেওয়া নেই। এই বইটিতে লেখক তার নিজস্ব শক্তির কথা বলেছেন। তিনি তার মাইন্ড পাওয়ারের মাধ্যমে কিভাবে অসাধারণ খেলা ও অদ্ভুত কাজ করতে পারেন, তা এই বইটিতে উল্লেখ করেছেন। তবে এই বইটি পড়ার মাধ্যমে আপনার মাইন্ড পাওয়ারের অসাধারণ কিছু ধারণা পাবেন এবং এই বিষয়ের উপর আপনাদের আকৃষ্ট করবে।