জিন্সের মত জীবন! উপমা মিনার মাহমুদের। শুধু কী উপমা! জীবনটাকে উল্টেপাল্টে দেখেছেন। জিন্সের মত কাটাছেড়ায় তাঁর কাজ নির্মিত হয় আধুনিক তারুণ্যের ঈর্ষণীয় উপমায়। আবার নিজেই নিজের মৃত্যুপরোয়ানা দেন অবলীলায়। পরোয়ানায় লিখেন ঝকঝকে মেদহীন ভাষায়। যেন আধুনিক কাব্যময় একটা কবিতা। সাপ্তাহিক বিচিত্রা দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সাংবাদিকতার শুরু। তার আগে তরুণ বয়সেই ছোট গল্পের হাত ধরে হাঁটাহাটি। বিচিত্রায় গল্পের তীক্ষ ভাষা আর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অনুপম শৈলী’র রিপোর্ট জানান দিচ্ছিল নতুন কথার। ঠিক তখন পদত্যাগে বাধ্য করা। এরপর ১৯৮৭ সাল। সাপ্তাহিক ‘বিচিন্তা’র শুরু। মুক্ত তারুণ্যের উচ্ছলতা! মিনার মাহমুদের সাহস আর প্রশ্রয়ে বাংলাদেশে তারুণ্যদীপ্ত সাংবাদিকতার নতুন মাত্রার বিদ্রোহী ইতিহাসের সূচনা। এদেশে প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকতায় আমুল পরিবর্তন। মিডিয়ার প্রায় সবখানে নতুন ধারার দোর্দন্ড প্রতাপ। ১৯৯০-এ দ্বিতীয় প্রজন্মের ‘বিচিন্তা’ও সুখকর হয়নি। উপায়হীন মিনার মাহমুদ আমেরিকার ‘ডিজিটাল কুন্তাকিন্তে’। অ্যালেক্স হেলী’র আমেরিকায় ১৮ বছরের দাসত্বের জীবন একদিন শেষ হয়। তরঙ্গীয় শৃঙ্খলমুক্ত সম্পাদকের প্রত্যাবর্তন। বিচিন্তা’র তৃতীয় প্রজন্ম। পাঠকেরা নেয়নি! ‘....আমি কেন আত্মহত্যা করলাম? .....আসলে নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। কারও প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ আছে, আমার বাংলাদেশের সার্বিক সমাজব্যবস্থায়।’ মিনার মাহমুদের সুইসাইডাল নোটে মৃত্যুর কারণ বর্ণনা! এই সমাজ নিয়ে এমন শত কোটি অভিযোগ রয়ে গেছে। প্রতি অনুপল সময়ে তৈরীও হচ্ছে। সব অভিযোগ নাস্তার টেবিলে গিলে খাচ্ছি আমরা। প্রতিদিনই! তাই বলে আত্মহনণ! উত্তর কোথায়? সমাজ ব্যবস্থা ব্যতীত আর কোন অভিয়োগ যাঁর নেই- এখানেই একজন মিনার মাহমুদ মিলে যায়। একজন আকাশের সমান মানুষ! কী ভেবেছিলেন, তিউনিশিয়া’র বো আজীজী’র মতোন সমাজ বদলের হাতিয়ার হবেন! তাঁর আত্মহত্যায় বাংলাদেশ জেগে উঠবে? হয়ত তাই! কোন মহৎ উদ্দেশ্য ব্যতীত মিনার মাহমুদ এই পথ বেছে নেননি। আমরা নিশ্চিত। লেখক হিসেবে মিনার মাহমুদ কেমন? পাঠক বিচার করবেন। তবে সাংবাদিকতায় মিনার মাহমুদ এবং তাঁর আধুনিক ভাষা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন হবে। একদিন। নিশ্চিত।