“মিডনাইট’স চিলড্রেন" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ সব আগে বলা দরকার সালমান রুশদির এ উপন্যাস সুররিয়ালিস্টিক ফর্মে রচিত। কোথাও কোথাও আমার কাছে পুরােপুরি সাইকাডেলিক বলে মনে হয়েছে। ফলে বাক্য বিন্যাস, ভাষা গঠন ও শব্দ প্রয়ােগ গতানুগতিক নয়-বরং জটিল। এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচ্য। এখানে যে বাস্তবতা অনুসৃত হয়েছে তাতে উঠে এসেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ। আমাদের স্বাধীনতা প্রসঙ্গটি এমনভাবে চিত্রিত করেছেন রুশদি যা অভূতপূর্ব। এমন ঐতিহাসিক এমন গভীর বাস্তব চিত্র, বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিষয়ে, আর কোনাে লেখকের লেখায় পাইনি-দেশে, কিংবা বিদেশে। বাংলা অনুবাদে প্রমিত বাংলা বানান-রীতি অনুসরণের চেষ্টা করা হয়েছে। কাজেই বানান নিয়ে বিভ্রান্ত হবার কিছু নেই। যতাে অভিযোগই থাক, সালমান রুশদি বিশ্বমানের অত্যন্ত বড় মাপের সাহিত্যিক-সেটা স্বীকার করতেই হবে, মিডনাইটস চিলড্রেন তারই প্রমাণ।
সালমান রুশদি
ভারতীয় বংশােদ্ভূত বৃটিশ উপন্যাসিক গদ্যকার সালমান রুশদি পৃথিবীব্যাপী আলােচিত সমালােচিত হয়েছেন বহুবার। ১৯৭৫ সালে প্রথম উপন্যাস লেখায় হাতেখড়ি। তারপর পেছনে তাকাতে হয়নি। তাঁর লেখায় একধরনের বিষয়ের বিষয়িক প্রতীয়মান বিশ্লেষণ চোখে পড়ে। তার গদ্যের আধুনিকতার সে-এ আমরা সহজেই খুঁজে পাই বাস্তব পট-পরিবর্তন। রহস্যময়ী পালাবদলের রুশদি একেবারেই অনবদ্য... মনবিশ্লেষণে নির্মম অনুভূতির ভেতর পাঠকদের ঘােরপাকে ফেলে দেন অজান্তে। তার খন্ড খন্ড শব্দের ব্যবহার সয়ে যাওয়া ভাবনার প্রান্তে রুশদি এগিয়ে এসেছেন স্মৃতির ক্যানভাসে। মানবজীবনের ইতিহাসে চাবুকের মত শব্দ ভাষণে দুর্দান্ত খেলােয়াড়। তার গদ্যের বিষয় আসয় গড়ে উঠেছে মানুষের বাস্তবতার মূল শিকড়ে। তিনি দেখাতে চেয়েছেন প্রতিদিনের সমাজ সভ্যতায় এক নিরাবরণ জাদুর দরজা। ভাবনাহীন প্রতিশ্রুতি নিয়েই রুশদি হেঁটে চলেছেন নিরবধি স্বপ্নের মাঝে। দাঁড়াতে চেয়েছেন ধ্রুপদী রাগিনীর বাস্তবতায়। ফেলে আসা দিন বদলের হিংস্রতায় আঙুল দিয়ে আমাদের দেখিয়েছেন সত্য অসত্যের না বলা অনেক কথা। শব্দের সুরে বাঁধতে চেয়েছেন প্রতীক নির্ভরতার সড়ক। তার গদ্যের অনুপম ভাষা আর টুকরাে খন্ড অংশের ধারাবাহিকতায় পৌছে দিতে পেরেছেন সচেতন পাঠকদের কাছে। ব্যক্তিগতভাবে সালমান রুশদি সহজ সরল ব্যঙ্গাত্বক নিষ্ঠুর গদ্যের জনক।। ভারতীয় বংশভূত বলে তাঁর লেখায় ভারতীয় সমাজ-রাজনীতি ইতিহাস ওঠে আসে। সালমান রুশদি মানে অদ্ভুদ-সত্য দেশ প্রেমে সঠিক সত্যবান পুরােহিত।