কবিতার নিবাস ছিলো মধ্যযুগে। কবিতা না-বলে তাকে লোকে বলতো পদ্য। ঈশ্বর গুপ্ত তাঁকে গঙ্গাজলে ধুয়ে-মুছে ভদ্র চেহারা দিতে চেষ্টা করেছিলেন। প্রাত্যহিক জীবনের ভাষা, ছন্দ, দেবদেবী, রাজারানীর দরবার থেকে তাকে সরিয়ে এনে আধুনিকতার চেহারা দিতে চেষ্টা করেছিলেন তিনি।
ইংরেজ রাজত্বে ইংরেজি না-জানার অপরাধে তিনি আধুনিকতার আলো দেখিয়েও সে আলোকে জ্বালিয়ে রাখতে পারলেন না। ইংরেজি শিখে রঙ্গলালও নয়। রঙ্গলালের পড়শি মধুসূদন দত্ত ইংরেজি শিখলেন আরও ভালো করে।
পিতামাতাকেও ত্যাগ করলেন। কবিতা লেখেন বাংলায়, কিন্তু বাংলায় একটি কথাও বলেন না। একটি বাক্যও না। তা সত্ত্বেও, তাঁর ইংরেজি বিদ্যা খাটিয়ে বাংলায় লিখলেন পুরাণের কাহিনী। জন্ম থেকে হিশেব করলে তাঁর দু শো বছর পূর্তি হলো। বাঙালিরা আজও ভোলেনি তাঁকে। কী জাদু তাঁর!
গোলাম মুরশিদ
গােলাম মুরশিদ | গবেষক ও লেখক। ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি, মানবীবিদ্যা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে তাঁর বিচরণ। বর্তমান গ্রন্থটি মানববিদ্যা সম্পর্কে তাঁর প্রথম রচনা। ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত এই গ্রন্থটি উপমহাদেশে মানবীবিদ্যা-বিষয়ক পথিকৃতের কাজ বলে বিবেচিত হয়েছিল। তারপর আরও প্রকাশিত হয়েছে রাসসুন্দরী থেকে রােকেয়া : নারীপ্রগতির একশাে বছর (১৯৯৪) এবং নারী ধর্মইত্যাদি (২০০৭)।
১৯৯৪ সালে প্রকাশিত তাঁর মাইকেল-জীবনী আশার ছলনে ভুলিতে তিনি কিংবদন্তির ধূম্রজাল থেকে মুক্তি দিয়ে। মাইকেলের জীবন বস্তুনিষ্ঠভাবে পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। ২০০৬ সালে প্রকাশিত তার হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি এমনই। একটি মননশীল এবং পথিকৃতের কাজ। পুরােনাে বাংলা গদ্যের ইতিহাস রচনায়ও - তিনি অসাধারণ অবদান রেখেছেন। রবীন্দ্রনাথ বিলেতে বাঙালিদের ইতিহাস নারী-প্রগতি ইত্যাদি নানা বিষয়ে তার গবেষণা বাংলা সাহিত্যের জগৎকেই বস্তুত সমৃদ্ধ করেছে। বহু বছর অধ্যাপনা এবং বেতার সাংবাদিকতার কাজ করেছেন।