"মেমসাহেব" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা:
অতি শৈশবে মাকে হারিয়েছি। তারপর অকল্পনীয় দুঃখ-কষ্টে দিন কাটিয়েছি। সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের আর পাঁচজন ছেলেমেয়ের মত স্বপ্ন দেখেছি কিন্তু সে স্বপ্ন কোনদিনই বাস্তব হয়নি। এরই মধ্যে কলেজে পড়তে পড়তেই হঠাৎ দুর্ঘটনাক্রমে খবরের কাগজের রিপাের্টার হলাম। দুপুর-বিকেল থেকে মাঝরাত্তির পর্যন্ত কাজ করেও প্রথম বছর কানাকড়ি জুটল না। পরের বছর থেকে মাসিক মাইনে’ হল দশ টাকা এবং তাও জুটত আট আনা-এক টাকার কিস্তিতে। একশ’ পঁচিশ টাকা মাইনের রিপাের্টারের চাকরির আশায় গণ্যমান্য-বরেণ্য সাংবাদিকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে জুটেছে শুধু মিথ্যা আশ্বাস আর অপমান। একজন অতি প্রভাবশালী চীফ রিপাের্টার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবার সময় বলে দিলেন, বামন হয়ে চাদে হাত দেবার চেষ্টা করছ কেন?
জীবনে এই দুঃখ-দারিদ্র্য অপমান-তিরস্কারের মরুপ্রান্তরে বিচরণ করতে করতেই হঠাৎ একদিন শ্যামলিমার দেখা পেলাম । আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখে জীবনযুদ্ধে মেতে উঠলাম। তারপর কত কী ঘটে গেল! যা হবার নয়, যা অসম্ভব অকল্পনীয় ছিল, তাই সত্য হল। মাত্র তিনটি পয়সার অভাবে ট্রামের সেকেন্ড ক্লাসে চড়তে পারিনি কতদিন কিন্তু সেই আমিই ঘুরে বেড়ালাম দেশ-দেশান্তরে, এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশ। তারপর হঠাৎ একদিন অতীত দিনের দুঃখ-কষ্ট ত্যাগ-তিতিক্ষা অপমান-তিরস্কার আর প্রেম-প্রীতি স্নেহ-ভালবাসার রসদ সম্বল করেই কলম ধরি । মেম সাহেব’ এই পর্যায়েরই একটি উপন্যাস।
নিমাই ভট্টাচার্য
নিমাই ভট্টাচার্য-র জন্ম ১০ এপ্রিল ১৯৩১। শিক্ষাদীক্ষা ও সাংবাদিক জীবনের শুরু কলকাতায় পরে দিল্লিতে পচিশ বছর বিশিষ্ট কয়েকটি সংবাদপত্রের রাজনৈতিক-কূটনৈতিক সংসদীয় সংবাদদাতা। ইনি ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন, জওহরলাল নেহরু, পণ্ডিত গােবিন্দবল্লভ পন্থ, লালবাহাদুর শাস্ত্রী, ভি. কে. কৃষ্ণমেনন, মােরারজী দেশাই, যশােবন্ত রাও চ্যবন, ইন্দিরা গান্ধী প্রমুখ নেতৃবৃন্দের বিশেষ স্নেহভাজন ছিলেন। কভার করেছেন নির্জোট শীর্ষ সম্মেলন, কমনওয়েলথ প্রধানমন্ত্রী সম্মেলন, রাষ্ট্রপুঞ্জ, প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফর ইত্যাদি; রানি এলিজাবেথের সঙ্গে ছ’সপ্তাহ ধরে ভারত-নেপাল ঘুরেছেন তাছাড়া আইসেনহাওয়ার, হাে-চি-মিন, চৌ এন লাই, ক্রুশ্চেভ, নাসের, টিটো প্রভৃতি বিশ্ববরেণ্য নেতৃবৃন্দের সফর কভার করেছেন। ঘুরেছেন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। লেখকের প্রথম বই ‘রাজধানীর নেপথ্যে প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালে। ১৯৬৮ তে ‘মেমসাহেব’ প্রকাশিত হবার পরই পাঠকসমাজে খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।