উপন্যাসের নায়ক হাসান যেন এক গ্রিক ট্র্যাজেডির নায়ক, নিয়তি-নির্ধারিত তার পরিণতি। যে অপরাধের জন্য সে দায়ী নয়, সেই অপরাধের গ্যাঁড়াকল তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছেÑকিছুতেই গিঁট খুলতে পারছে না। গভীর রাতে খবরের কাগজের অফিসের কাজ সেরে পায়ে হেঁটে বাসায় ফেরার পথে দুই পথবেশ্যার সঙ্গে তার দেখা হয়ে যায়। এই অপরাধে টহল পুলিশ তাকে থানায় ধরে নিয়ে যায়। তারপর একের পর এক নানা সামাজিক সংকটে তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এই মহাসংকট কালে তার শৈশব-কৈশোর-অতীত জীবনের সব ঘটনা নানা চরিত্রপাতের মধ্য দিয়ে মঞ্চস্থ হতে থাকে তার অবচেতন মনে। সে লক্ষ করল, তার জীবনে দেখা সকল ট্র্যাজিক ঘটনার শিকার হতভাগ্যরা কেউ তাদের পরিণতির জন্য নিজে দায়ী নয় একটা সিস্টেম তাদের এমনভাবে বেঁধে ফেলেছে, যার পরিণতি সবার অজানা। এই উপন্যাসে বর্ণিত চরিত্র ইয়াছিন, মর্জিনা, আকলিমা, আবদুল খালেক ও মৌলবি আবদুল কাদেরের করুণ পরিণতি, উপন্যাসের নায়ক হাসানের মনস্তত্বে অবিচ্ছেদ্য সংশ্লেষ তৈরি করেছে। সেই সঙ্গে হাসান ও বিলকিস বেগম ওরফে বিলুর বুদ্ধিবৃত্তিক প্রচ্ছন্ন প্রেম ও পরিণতি এক নতুন মাত্রায় উদ্ভাসিত হয়েছে। এই উপন্যাসটি হতে পারে স্বাধীনতা-উত্তর পঞ্চাশ বছরের সামাজিক ইতিহাসের এক রূপক দলিল। প্রধানত ‘চৈতন্য-প্রবাহ’ রীতিতে উপন্যাসটি লিখিত হলেও বহু রীতির সংমিশ্রণে এক নতুন শৈলির প্রকাশ ঘটেছে।