সম্রাট জাহাঙ্গীরের আত্মকথা পাক-ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসে এক অমূল্য সংযোজন। অর্পূব সরল এবং অকুন্ঠ মনোভাব নিয়ে সম্রাট তাঁর রাজ্যশাসন সংক্রান্ত ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করেছেন।
১৬০৫ খ্রীস্টাব্দের ১০ই অক্টোবর সেলিম সিংহাসনে আরোহণ করেই ‘জাহাঙ্গীর’ বা জগজ্জয়ী উপাধি ধারণ করেন। প্রবল পরাক্রান্ত তুর্কী সম্রাটদের সঙ্গে নিজেকে এক পর্যায়ভুক্ত করার বাসনা ছিল তাঁর। শুধু তাই নয়, আলেকজান্ডারের মত দিগ্বিজয়ী হবার আকাঙ্ক্ষাও তাঁর ছিল, কেননা যথেষ্ট বিনয় সহকারে হলেও তিনি ঘোষণা করেছিলেন- ‘সর্বশক্তিমানের অপার অনুগ্রহে যদি দীর্ঘজীবন পাই এবং ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়, তবে আমার নামের সার্থকতা আমি প্রমাণ করে যাব'।
তানিখ-ই-জাহাঙ্গিরী, দোয়াজদা-সালা-জাহাঙ্গিরী, ওয়াকিয়াত-ই-জাহাঙ্গিরী, ইকবালনামা ইত্যাদি বিভিন্ন নামে বহু বই জাহাঙ্গিরের আত্মজীবনী বলে চালানো হয়েছে। এগুলোর প্রামাণিকতা নিয়ে মতভেদ এবং বিতর্কের অবকাশ রয়েছে প্রচুর। এর কোনটাতেই পুরো রাজত্বকালের বিবরণ পাওয়া যায় না। যতদূর জানা যায় সম্রাট জাহাঙ্গীর নিজেই তাঁর আত্মজীবনী কিছুকাল পর্যন্ত লিখেছেন, পরে অন্য লোককে মৌখিক নির্দেশ দিয়ে সেটা শেষ করবার জন্য বলেছিলেন। রাজত্বকালের বারো বছরের সম্বলিত আত্মকথা ‘দোয়াজদা-সালা-জাহাঙ্গিরী’ নামে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হবান পর সম্রাটের নির্দেশে বিতরিত হয়।
‘দোয়াজদা-সালা-জাহাঙ্গিরী’ বইখানি মূল ফার্সী পাণ্ডুলিপি থেকে ইংরেজীতে অনুবাদ করেন মেজর ডেভিড্ প্রাইস (মেম্বার, ‘রয়্যাল এসিয়াটিক সোসাইটি’, ওরিয়েন্টাল ট্রানশ্লেশন কমিটি)। ‘ওরিয়েন্টাল ট্রানশ্লেশন কমিটি’ কর্তৃত বইখানি লন্ডনে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮২৯ সালে। বর্তমান গ্রন্থখানি তারই অনুবাদ। কাজেই এটাকে সম্রাটের নিজের লেখা বলে মনে করবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
এ ধরনের আত্মজীবনীর ঐতিহাসিক মূল্য পুনরুল্লেখের প্রয়োজন রাখে না। অন্তর্নিহিত স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের গুণেই এর আবেদন সর্বকালের জন্য।