মেঘেদের দিন (হার্ডকভার)
আজ কথা বলব তরুণ লেখক সাদাত হোসাইন এর লেখা "মেঘেদের দিন" বইটা নিয়ে। বইটার কাহিনী আবর্তিত হয় মারুফ, তানিয়া, বুড়ি এই তিনজনকে ঘিরে। প্রসঙ্গত, একুশ শতকের শিক্ষিত বাঙালি তরুণ-তরুণী দম্পতির প্রতিনিধিত্বকারী মারুফ-তানিয়া দম্পতি হঠাৎ মিলে যাওয়া ছুটিতে মারুফের গ্রামের বাড়ি নীলতলি বেড়াতে যায়। প্রকৃতিকে কাছ থেকে উপভোগ করতে এবং গ্রামের আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার যাত্রাটা ধীরে ধীরে রূপ নেয় দুঃস্বপ্নে। 🌫️ উপন্যাসটাতে লেখক আমাদের সমাজের কিছু অতি পরিচিত ও জঘন্য সামাজিক সমস্যার অত্যন্ত দারুণভাবে সিনেম্যাটিক রূপ দিয়েছেন। এরকমই একটা প্রেক্ষাপটের অংশ মূলত বুড়ি।🌷 বুড়ি যখন জন্মায়, তখন বুড়ির মা বুড়িকে দেখে আফসোস করেন। না, তিনি একজন মেয়েকে দুর্বল ভাবেন কিংবা ছেলে ছাড়া বংশ আগাবে না, সে কারণে না; বরং তিনিতার আশেপাশের দুনিয়াটাতে একজন মেয়ের বেড়ে ওঠা আঁচ করতে পেরেছিলেন। তিনি জানতেন তার সমাজে একজন মেয়েকে কোন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। 🙂 এরকমই একটা প্রেক্ষাপটে বুড়ির সাথে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার দরুন জড়িয়ে পড়ে তানিয়া। কিন্তু সম্পদের মোহে মোহিত মারুফের আত্মীয় স্বজন যখন ভাল মানুষের মুখোশ ত্যাগ করে, তখনই মূলত মারুফ আর তানিয়ার জীবনে আগমন ঘটে ঝড়ের। 🖇️ এখানে একটা ব্যাপার উল্লেখ্য, প্রতিটা চরিত্র কাহিনীর বিচারে সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটা চরিত্রই স্বতন্ত্র মাহাত্ম্য বহন করে। সব লেখক এই বিষয়টা ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হন না। 👑 লেখক বইটাতে খুবই চমৎকার কিছু উপমা ও রূপক ব্যবহার করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে, হাঁসের ছানাগুলাকে কম খাওয়ানোরটা আমার সবচেয়ে প্রিয়। আমার কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী রূপকগুলার একটা মনে হয়েছে এটা। এখনকার সময়ের সাথে প্রচন্ড সঙ্গতিপূর্ণ। পুরা বইটা এরকম আরও রুপকে পূর্ণ যা আপনার মনকে বেশ ভালোভাবে নাড়া দিতে সক্ষম।💡 আরেকটা ব্যাপার বেশ ভালো লেগেছে যে, লেখক সাদাত হোসাইন উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে তার অনন্য এক ধরন তৈরিতে দারুণভাবে সফল। যদি দুইটা ভিন্ন অনুচ্ছেদ দেয়া হয়, তবে তার পাঠকগণ তার লেখনী আলাদা করতে পারবেন। 🎓 উপন্যাস এর শেষটা উপন্যাসটাকে একটা অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। লেখক এই বিষয়টার পূর্ণ প্রতিফলন দেখিয়েছেন যে, "মেঘেদের দিন- এর আড়ালেও সূর্য হাসে।" আশা করি, বইটা নিয়ে কিছুটা আগ্রহ তৈরি করতে পেরেছি।
মেঘেদের দিন ।।।। বরষাপীড়িত এক গ্রাম নীলতলিকে নিয়ে। যে গ্রামে সবকিছু স্বাভাবিকের মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু ব্যাপার রয়েছে।যেমন: 'বুড়ি' নামক এক শিশুকন্যার;মেয়ে হয়ে বেঁচে থাকার লড়াই।তার সংগ্রাম এতই তীব্র যে এই ক্ষুদ্র বয়সে তার মা শাফিয়ার কাছ থেকে শুনতে হয়,' মাইয়া মানুষের শরীর যত বড় হইতে থাহে, তাগো দুনিয়াডা তত ছোট হইতে থাহে।' আবার, অন্যদিকে বিয়ের পরেও যে প্রেম আবেগের মোহ কাটে না তা তুলে ধরা হয়েছে মারুফ-তানিয়া নামক দম্পতির কার্যকলাপের মাধ্যমে। মেয়েদের বসবাস,বিবাহ পরবর্তী প্রেম এবং পারিবারিক কোন্দোল এইসব হচ্ছে বইয়ের বিষয়বস্তু। তাই বইটি পাঠক বন্ধুদের জন্য খুবই ভালো একটি বই।।।
তানিয়া ও মারুফ দম্পতি,বুড়ি নামের এক কিশোরী এর জীবনের কিছু অংশ নিয়ে এ গল্প। আমাদের সমাজের উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে গরিবের নারীর প্রতি যে একটা অমানবিক দৃষ্টিভঙ্গি তা সুন্দর ভাবে লেখক তুলে ধরেছেন।এক একটা লালায়িত পুরুষের দৃষ্টি নারীর মনে কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তা নারী না হয়ে জন্মালে হয়তো বুঝা সম্ভব নয়।বিশাল এ পৃথিবী তারা নিজেদের বিশ্বাসের জগৎ কে সংকীর্ণ করতে বাধ্য হয়। এছাড়া ও সময়ের সাথে সাথে মানুষের মানসিক পরিবর্তন ফুটে উঠেছে এ গল্পে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। বর্ষার ধারায় ভিজে প্রকৃতির সাথে মিশে যাক আমাদের হৃদয়, পরিশুদ্ধ হয়ে যাক আমাদের চিন্তা ধারা।সবার মনে বেঁচে থাকুক মানুষের প্রতি ভালোবাসা। আশাকরি বইটি পড়লে সবার কাছে ভাল লাগবে।