রোমাঞ্চ, বিষাদ ও চরম নাটকীয়তার গল্প মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সাজিদ ও সাইফ নামে দুই দুঃসম্পর্কের চাচাতো ভাইয়ের গল্প। সাজিদ কষ্টে সৃষ্টে ডিপ্লোমা পাশ করে একটি ওয়ার্কশপ খুলে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। সাজিদের বাবা সরকারি প্রকৌশলী ছিলেন। অল্প বয়সে মারা গেলেও সন্তানের জন্য যথেষ্ঠ রেখে গিয়েছিলেন। অথচ সাজিদকে নিয়ে মায়ের অনেক স্বপ্ন থাকলেও সে তার কিছুই পূরণ করতে পারে না। তবে তার বিশ্বাস, চাকরি দিয়ে বড় হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। বরং যোগ্যতা অনুসারে স্বাধীন ব্যবসা বড় চাকরির চেয়েও ঢের ভালো। তাই সে একটা মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ খোলে ঝিনাইদহ শহরে। অন্যদিকে, সাজিদের চেয়ে দুই বছরের ছোট সাইফ। উকিল বাবার ছেলে সাইফ তার বাবার মতোই কূটবুদ্ধিতে পটু। তবে ছাত্র হিসেবে সে খুব মেধাবী। মেডিকেল এডমিশনে সে সারা দেশের মধ্যে ৩য় হয়। সে সাজিদকে গোপনে গাড়ির মিস্ত্রি বলে ভৎসনা করতো। তার দেখাদেখি কথাটা একালায় চল হয়ে যায়। তাই দুই ভাইয়ের সম্পর্ক হয়ে দাঁড়ায় সাপে-নেউলে। একদিন ক্রিকেট খেলায় সময় সাইফকে আঘাত করে সাজিদ। ফলে তাদের শত্রুতা বাড়াবাড়ি আকার ধারণ করে। সাজিদকে শায়েস্তা করার ছক কষে সাইফ ও তার বাবা লতিফ উকিল। তন্নী নামের একজনকে দিয়ে সাজিদের নামে মামলা করায় লতিফ উকিল। এখানে উল্লেখ্য - সাজিদের আরো এক কাকা ছিল, সে হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করলে তার দাদা তাকে তাজ্য করে। সম্প্রতি তার সেই কাকা কাকী দূর্ঘটনায় মারা যায়। এই সুযোগে তাকে বাড়িতে আনে লতিফ উকিল।
মামলা কোর্টে গড়ায়। সাজিদ মীমাংসা করতে চেয়েছিল, কিন্তু তন্নী মামলা লড়তেই উৎসাহী ছিল। কোর্টে দুই পক্ষই সমান সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করলেও সাজিদের মা তন্নীর পক্ষ অবলম্বন করে বলে তন্নীই মামলায় জিতে যায়। সাজিদ তাতে হতভম্ব হয়ে যায়। পরদিনই সাজিদের অর্ধেক সম্পত্তি বুঝে নেই তন্নী। একবাড়িতে থেকেও দুজন শত্রুভাবাপন্ন হয়ে কাটিয়ে দেয় অনেকদিন। কিন্তু সাজিদের মায়ের বিচক্ষণতায় শেষমেশ মিল হয় ওদের। সাজিদ ও তন্নী খুবই কাছের বন্ধু হয়ে যায়। তবে সাজিদের মা এই সম্পর্কটাকে বিয়েতে গড়াতে চাইলে তন্নী বিষয়টা ভালো ভাবে গ্রহণ করে না। সাজিদকে সে লোভী ভাবে। এরই জেরে স্ট্রোক করে মারা যায় সাজিদের মা। সাজিদের মায়ের মৃত্যুর জন্য তন্নীর সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে বাড়ি ও সম্পত্তি বিক্রি করে শহরে চলে যায় সাজিদ। এই সুযোগে সাইফ তন্নীর কাছে আসার সুযোগ পেয়ে যায়। বছর পাঁচেক পরে সাজিদ ব্যবসায় অনেক উন্নতি করে। কিন্তু সে কোনোভাবেই তন্নীকে ভুলতে পারে না। তাই সে তন্নীকে দেখতে আসে। কিন্তু ততদিনে তন্নী ও সাইফ তার চেয়েও বেশি উন্নতি করে ফেলে। সাজিদ জানতে পারে যে, লতিফ উকিল ডাক্তার সাইফের সাথে তন্নীর বিয়ে ঠিক করেছে। হতাশ ও বিপর্যস্ত সাজিদ বাইকে ফিরার পথে এক্সিডেন্ট করে। প্রাণে বেঁচে গেলেও, তার পা কেটে বাদ দিতে হয়। তবে সাজিদের এই দুর্দিনে তন্নী পাশে এসে দাঁড়ায়। অবশেষে তারা এক হবার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। কিন্তু তখনই স্বার্থের লোভ সাজিদকে বাঁচতে দেয় না। তাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু কে করে সেই হত্যা? কেন করে? তা যেন রহস্যই রয়ে যায়। লেখক প্রথমে রসবোধযুক্ত গল্পে পাঠককে হাসির খোরাক দেয়েছি, মাঝখানে সম্পর্কের সংঘাতে পাঠককে ভাবাতে বাধ্য করেছে। শেষের ট্রাজেডি দিয়ে পাঠকের চোখে জল ঝরিয়েছেন। তন্ময় সাত্ত্বিকের সবচেয়ে পাঠকপ্রিয় এ উপন্যাসটি আপনার হৃদয় কেড়ে নেবে, সন্দেহ নেই।