রাজীব পারভেজ তরুণ রাজনীতিক ও উদ্যোক্তা। জন্ম ৫ মার্চ ১৯৮২, পটুয়াখালী জেলায়। পিতা মরহুম অধ্যাপক আবদুল মান্নান সিকদার ও মাতা ফিরোজা বেগম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিভিল সার্ভিস কলেজ হতে গভর্নেন্স অ্যান্ড পাবলিক পলিসি বিষয়ে মাস্টার্স এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েট সমাপ্ত করে বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় লোক প্রশাসন বিভাগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে ই-গভর্নেন্স চর্চা বিষয়ে এমফিল করছেন। এর পূর্বে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে ¯স্নাতক সম্পন্ন করেন।
উদ্যোক্তা হিসেবে গভর্নেন্স পলিসি এক্সপ্লোর সেন্টার, স্ট্রাটেজিকা কমনিউকেশন্স ও এক্সপ্লোর বাংলা’র নির্বাহী প্রধান। তিনি অনলাইন নিউজপোর্টাল ও দৈনিক পত্রিকায় কলাম লেখক। ছাত্রজীবনে তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
ছোটবেলা থেকেই রাজীব রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য। এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর কেন্দ্রীয় মুখপত্র উত্তরণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েটদের সংগঠন গণতান্ত্রিক ঐক্য পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সমাজকল্যাণ পরিষদ এর সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে জড়িত। তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পনেরটিরও অধিক সংকলন সম্পাদনার কাজ করেছেন।
ভূমিকা বাংলাদেশ, স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু-একই সূত্রে গাঁথা এবং অবিচ্ছেদ্য। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবজ্জ্বল অধ্যায় স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। এ অধ্যায়ের মহানায়ক হচ্ছেন অবিসংবাদিত নেতা, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর ঘটনাবহুল বৈচিত্র্যমণ্ডিত রাজনৈতিক জীবন এতটাই ব্যাপক যে, তা কোন সীমিত পরিসরে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধুর জীবন সংগ্রাম নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে গবেষণা চলছে এবং এ চর্চা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। ‘নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু’ বইটিতে বঙ্গবন্ধুর বাল্যকাল থেকে শুরু করে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন এবং সর্বশেষ তাঁর নিষ্ঠুরতর প্রয়াণ ২০টি অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।
নেতৃত্ব এমন একটি বিশেষ গুণ, যা সকলের মধ্যে থাকে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মধ্যে সেই গুণটি ছিল। বলা চলে, ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা প্রকাশ পেতে থাকে। বঙ্গবন্ধু যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তখন শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। এই আন্দোলনের একেবারে শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধু এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ গঠন, পরবর্তী বছরে আওয়ামী লীগের আত্মপ্রকাশ, পঞ্চাশের দশকে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে সরকার পরিচালনা, আইয়ুব খানের মার্শাল ল’ জারির সময়কাল, ’৬৬তে ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা মোকাবেলা, ’৭০-এর নির্বাচন, একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ-সবখানেই আমরা তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ছাপ খুঁজে পাই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তাঁর নেতৃত্বের এই ধারা অব্যাহত থাকে। যার ছাপ খুঁজে পাওয়া যায় এ বইটিতে।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এ পর্যন্ত সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা অনেক। যদি একটু গভীরভাবে দেখি, তাহলে দেখা যাবে বইগুলোতে বিভিন্ন লেখায় বঙ্গবন্ধুর পুরো জীবনকর্ম তুলে আনার চেষ্টা চালানো হয়েছে। ফলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ভিত্তিক অনেক ঘটনাই আড়ালে থেকে গেছে। এজন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে পর্যায়ক্রমিকভাবে উপস্থাপন করার প্রয়োজন অনুভব করি। প্রায় বছরখানেক ধরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্নজনের গুরুত্বপূর্ণ লেখা সংগ্রহ করে প্রকাশনায় আসি। এ বইটিতে সবগুলো লেখাই বিষয়ভিত্তিক এবং সেগুলোর লেখকরাও সেই অধ্যায় ও ঘটনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আলোচিত বাকশাল ব্যবস্থা নিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের অনেকেই কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। বিরোধীপক্ষে যারা আছেন, তারা একতরফাভাবে এর সমালোচনা করেন। অনেকের মনেই বাকশাল নিয়ে আছে নানান বিভ্রান্তি। বাকশাল নিয়ে এখানে আলাদা একটি অধ্যায় করা হয়েছে, যেন পাঠক সঠিক বিষয়বস্তু খুঁজে পান। অধ্যায়ভিত্তিক হওয়ার ফলে এভাবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যেকোন ঘটনা পাঠকরা খুব সহজেই খুঁজে বের করতে পারবেন।
এই সংকলনে যাদের লেখা প্রকাশিত হয়েছে, তাঁদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা যেমন রয়েছেন, তেমনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদরাও রয়েছেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদ, গবেষক, ইতিহাসবিদ, অর্থনীতিবিদ, আইনজীবী, সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক প্রমুখদের প্রবন্ধ-নিবন্ধ নিয়ে নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধু বইটি রচিত হয়েছে। অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি তাঁদেরকে। বঙ্গবন্ধুকে যাঁরা ঘনিষ্ঠভাবে জানতেন, সুযোগ হয়েছিল দল ও সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে তাঁকে অবলোকন করার, এমন সব ব্যক্তির স্মৃতিচারণে বইটিকে মানসম্পন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রকাশিত লেখাতে প্রয়াত কয়েকজন রয়েছেন যাঁদের তথ্যসমৃদ্ধ স্মৃতিচারণ সংকলনটিকে সমৃদ্ধ করেছে। সময়ের স্বল্পতা অথবা রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ততার জন্য অনেক ব্যক্তিবর্গ ইচ্ছে থাকা সত্তে¡ও, লেখা দিতে না পারায়, পূর্বোক্ত কোনো লেখা প্রকাশ করে তাঁদেরকে সংকলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখার চেষ্টা করেছি। কিছু ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক অনুমতি ছাড়াই লেখা সংগ্রহ করে প্রকাশ করেছি এই বিশ্বাসে যে, তাঁরাও নিশ্চয়ই চান বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও সংগ্রামের কাহিনী যেন পাঠকদের কাছে সততভাবে পৌঁছায়।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, আত্মত্যাগ, সম্মোহনী দেশপ্রেম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারি। সেজন্য তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনকর্ম, ইতিহাস নিবিড়ভাবে জানা প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুকে ক্ষুদ্র দলীয় দৃষ্টিকোণে আবদ্ধ করা যাবে না, কারণ তিনি সার্বজনীন। আছেন দেশের কোটি মানুষের স্পন্দিত হৃদয়ে।
সংকলনটির কাজ শুরু করার পর অনেকে বিভিন্নভাবে উৎসাহ যুগিয়েছেন। তন্মধ্যে গভর্নেন্স পলিসি এক্সপ্লোর সেন্টারের সিলভিয়া লেনী ও প্লাবন মজুমদার, রোডম্যাপ কমনিউকেশনের গোলাম আহাদ, আনোয়ারুল আযম রনি ও শাহজাহান কবির সুমন, এক্সপ্লোর বাংলা’র ফরিদ আহমেদ ও হাসান মাহমুদ পলাশ, দৈনিক জনকন্ঠের আরিফুর সবুজ অন্যতম। তাদেরকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি শ্রাবণ প্রকাশনীর কর্ণধার রবীন আহসানের কাছে, যার নিরলস শ্রমের মাধ্যমে বইটি এমন সুন্দরভাবে প্রকাশ পেয়েছে। সংকলনটিতে অনিচ্ছাকৃত কোনো ভুলত্রুটি চোখে পড়লে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য সবিনয়ে অনুরোধ রইল। ভুলত্রুটি, ঘাটতিজনিত বিষয়ে পাঠকদের পরামর্শ পেলে ভবিষ্যতে শুধরে নিয়ে কাজ করার আশা পোষণ করছি।