মােঃ আমিনুল আলম। বহু বিশেষণে, বহু আখ্যায়, বহু অভিধায় ভূষিত তিনি৷ কারও কাছে তিনি কর্মসাধনার অনন্য প্রতীক, কারও বর্ণনায় তিনি দরিদ্র মানুষের বিশ্বস্ত বন্ধু, কারও বিশ্লেষণে তিনি একনিষ্ঠ সেবাব্রতী, কারও কাছে তিনি মেন্টর বা গুরু, কেউ তাঁকে বলেছেন ব্র্যাকের ফিল্ড মার্শাল। এরকম নানা আখ্যায় তাঁকে চিহ্নিত করে তাঁর মহিমা ও অবদানের প্রশস্তি রচনা করেছি আমরা, চেয়েছি তার উচ্চতাকে পরিমাপ করতে। কিন্তু জীবদ্দশায় আমিনভাইকে যদি এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হতাে, কোন পরিচয়ে আপনি নিজেকে অভিহিত করতে চান, তাহলে আমাদের ধারণা, এতসব সুভাষণকে পাশে সরিয়ে রেখে তিনি বলতেন, আমি একজন ব্র্যাককর্মী মাত্র, কেবলই উন্নয়নকর্মী, আর কিছু নয়। বস্তুত দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এবং তাদের কল্যাণসাধনায় মােঃ আমিনুল আলম তাঁর সর্বস্ব পণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী, আত্মপ্রচারকে সর্বতােভাবে পরিহার করে চলতেন। অন্যের অবদানের স্বীকৃতি দিতে তাঁর কোনাে কার্পণ্য ছিল না অথচ নিজের প্রাপ্যটুকু গ্রহণ করার ব্যাপারে তিনি ছিলেন পরাঙ্মুখ।
শােষিত ও নিপীড়িত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আমিনুল আলম তাঁর নিজের জীবন্ত্রত খুঁজে নিয়েছিলেন। জীবনের শুরুতে বামপন্থর অনুসরণে তার চেতনার জগৎ নির্মিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে তাত্ত্বিকভাবে তিনি তার আগের মতাদর্শ থেকে দূরে সরে এসেছেন সত্য, কিন্তু এই মতাদর্শের মৌলিক চেতনা তাঁকে সর্বদাই ঘিরে রেখেছে। দরিদ্র মানুষের জন্য নিজের সহমর্মী হৃদয়কে তিনি কখনও প্রত্যাহার করে নেননি৷ বরং তাদের কল্যাণেই জীবনভর কাজ করে গেছেন। আর সেই কাজে তাঁর কোনাে ক্লান্তি ছিল না। বরং দিনরাত একাকার করে শ্রমশীলতার সর্বশেষ স্বেদবিন্দুকেও ব্র্যাকের কর্মকাণ্ডে নিয়ােজিত করেছেন। সার্বক্ষণিক কর্মসাধনার এমন এক জীবন তিনি নিজের জন্য নির্মাণ করেছিলেন, যে জীবন অনিবার্যভাবে অকালমৃত্যুর দিকে এগিয়ে গেছে। মাত্র ৬১ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু সেই সকরুণ সত্যটিকেই তুলে ধরে।
সুখেন্দ্র কুমার সরকার
সুখেন্দ্র কুমার সরকার ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলাধীন ঘােড়াগাছা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ও বিএড এবং ফিলিপাইনের ম্যানিলায় অবস্থিত এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট থেকে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর। ১৯৭৩ সালে একজন মাঠকর্মী হিসেবে ব্র্যাকে যােগদান করেন । তৎপূর্বে যুক্ত ছিলেন শিক্ষকতা পেশায়। মাঠপর্যায় থেকে কাজ শুরু করে সবশেষে ব্র্যাকের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। ২০১৩ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন কোষাধ্যক্ষ হিসেবে যােগদান করেন এবং এখনও ঐ দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ব্র্যাকের ওটেপ কর্মসূচির শুরু থেকে প্রায় শেষ পর্যন্ত তিনি এ কর্মসূচির পরিচালনার কাজে নিয়ােজিত ছিলেন। গত শতকের সত্তরের দশকে তিনি ব্র্যাকের বয়স্ক শিক্ষার বই ব্যবহারিক শিক্ষার পাঠলিপি ও অনুশীলন এবং শিক্ষা - সেবক সহায়িকা’ রচনার কাজে জড়িত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন এনজিওর সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। ক্রেডিট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (সিডিএফ)-এর তিনি প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ব্যুরাে বাংলাদেশ এনজিওর চেয়ারপারসন।