মওলানার চীন সফরের সবচেয়ে মূল্যবানও প্রামাণ্য দলিল তাঁর ‘মাও সে-তুঙ-এর
দেশে’। অনবদ্য অসাধারণ। মওলানার শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। চীনের অতীত ইতিহাসসহ বর্তমান
রাজনীতি, সংস্কৃতি, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা যে গভীর মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ
করেছিলেন, যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন, তারই শাব্দিক নির্যাস ‘মাও সে-তুঙ-এর
দেশে’।চীনের সমাজতান্ত্রিক জীবন তাঁকে আশ^স্ত করেছে, দুনিয়ার মেহনতি, শোষিত, বঞ্চিত
মানুষের মুক্তি আসন্ন। চীনকে তাঁর মনে হয়েছিলো দুনিয়ার বঞ্চিত মানুষের মুক্তি সংগ্রামের সব
চাইতে দৃঢ়, সব চাইতে আপনার বন্ধু। তার কাছে চীনকে মনে হয়েছে মানব মুক্তির মহাতীর্থ।
সংগত কারণেই এই গ্রন্থের ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছে শোষণের বিরুদ্ধে, সা¤্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে
তাঁর বজ্র নিঘোষ উচ্চারণ এবং সমাজতন্ত্রের প্রতি তাঁর অবিচল সমর্থন। আর এই সমর্থনের
শক্তি তাকে যুগিয়েছে তাঁর ধর্ম বিশ^াস ও দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন।
আমাদের ভ্রমণ সাহিত্যের ইতিহাসে এ গ্রন্থ চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ
অন্য দশটি বইয়ের মতো এটি শুধু সফরনামা নয়, এ হলো সমাজতান্ত্রিক চীনকে অনুধাবন
ও অনুভব করার সবচেয়ে নিবিড় প্রয়াস। আমাদের রাজনীতির গগনেও এই গ্রন্থ যোজনা
করেছে প্রত্যয়দীপ্ত মাত্রা। চীনকে নিয়ে লেখা আমাদের রাজনীতিবিদদের প্রথম প্রকাণ্ড
আয়োজন। মাত্র ৭৯ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থ তাই বিন্দুতে সিন্ধুর সংযোজন। পাশাপাশি আমরা
দেখতে পাই মানব মুক্তির মহানায়ক মওলানা ভাসানীর অন্তরাত্মাকে
আবদুল হাই শিকদার
আবদুল হাই শিকদার। জন্ম ১লা জানুয়ারি ১৯৫৭। দুধকুমার নদীতীরে, কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারীর দক্ষিণ ছাট গোপালপুর গ্রামে। পিতা কৃষিবিদ ওয়াজেদ আলী শিকদার। জননী হালিমা খাতুন। মওলানা ভাসানীর দীর্ঘ ছায়ায় আশৈশব বেড়ে ওঠা। প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার বেশির ভাগ কেটেছে রংপুরের কারমাইকেল কলেজে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়েছেন স্নাতক সম্মান, ঢাকা থেকে স্নাতকোত্তর। তার পুরো পরিবার অংশ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। প্রিয় কবি মনসুর বয়াতী, লালন ফকির, চণ্ডীদাস, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, ফররুখ আহমদ। স্বপ্ন ছিল চে গুয়েভারা হওয়ার। লেখালেখির শুরু স্কুল জীবনে। বিকাশ আশির দশকে। পেশা সাংবাদিকতা। বর্তমানে তিনি ঐতিহ্যবাহী ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ডিইউজে’র নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি সরকারি নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নিয়মিত সাহিত্য মাসিক এখন-এর মূল স্থপতি তিনি। কবিতা, ছড়া, জীবনী, গল্প, গবেষণা, ভ্রমণ, চলচ্চিত্র সব মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। জননেতা অলি আহাদের স্নেহধন্য তিনি। অলি আহাদের জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারও তাঁরই নেয়া।