লব্ধপ্রতিষ্ঠ লেখম মুহম্মদ বরকতুল্লাগহ সাহেবের ‘মানুষের ধর্ ‘ পুস্তকের দ্বিতীয় সংস্করণে সাহিত্যিক মাত্রেই যে আনন্দিত হইবেন তাহাতে সন্দেহ নাই। বাঙলা সাহিত্য যে দ্রুত গতিতে প্রসারলাভ করিতেছে তাহার প্রকৃষ্ট নির্দশন তাহার বর্দ্ধমান বৈচিত্র্য। ভারতের অন্যান্য প্রাদেশিক ভাষার সহিত তুলনা করিলে সহজেই দেখা যাইবে যে বাঙ্গলা সাহিত্য কল্পনা ও উচ্ছ্বাসের ক্ষুদ্র গন্ডি অতিক্রম করিয়া বাস্তব ও আদর্শকে জনসাধারণের সমক্ষে আনিতে অধিকতর চেষ্টা করিতেছে। বিজ্ঞান ও দর্শন ,সমাজতত্ত্ব ও রাষ্ট্রবিদ্যা, আজ উপন্যাস ও কবিতার সহিত মাসিক ,সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকায় সমান স্থান পাইতেছে ও তাহাদের পাঠকেরও অভাব ঘটিতেছে না। এমন কি শিশু সাহিত্য ও শব্দ-কোষে সকল বয়সের সাধারণ পাঠক দিগের জন্য জগতের নিগূঢ় তত্ত্ব উদঘাটনের প্রচেষ্টা বঙ্গসাহিত্য আজ দাবী করিতে পারে। যে সকল প্রাচীন পুস্তক বা প্রবন্ধের সমসাময়িক পাঠক লাভের সুভাগ্য ঘটে নাই আজ তাহা পুর্নমুদ্রিত হইয়া বিদ্বজ্জনের মনোরঞ্জন করিতেছে। যে সকল বঙ্গ সাহিত্যিক স্বাবলম্বী হইতে সহায়তা করিয়াছেন “পারস্য প্রতিভার” লেখক বরকতুল্লাহ সাহেব তাহাদের অন্যতম্ লেখকের ভারতীয় , ইসলামীয় ও পাশ্চাত্য দর্শনে ব্যুৎপত্তি কোথাও তাঁহার স্বাধীন চিন্তাকে ব্যাহত করে নাই। বরং তাহাকে পুষ্ট ও সমৃদ্ধ করিয়াছে। শিক্ষা তাকে ভারাক্রান্ত করে নাই , বরং বাহন রূপে তাহার ভাবকে স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল গতি দিয়েছে । পুস্তকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য এই যে লেখক কোথাও তাহার ধর্ম্মমতের প্রচার করিবার চেষ্টা করেন নাই, কিন্তু তাঁহার লেখার মধ্যে যে আধ্যাত্নিক আদর্শবাদ ফুটিয়ে উঠিয়াছে তাহাতে তাহার নিজের ধর্ম্ম অধিকতর প্রবনতার পরিচয় পাওয়া যায়। মতবাদের ব্যাখ্যার মূলে আদর্শটি প্রচারিত হওয়ায় তাহা অধিকতর চিত্তাকর্ষ হইয়াছে।
এই ক্ষুদ্র ভূমিকায় লেখকের গভীর চিন্তা বা অনুভুতির সম্যক পরিচয় দেওয়া সম্ভব নয়। মাত্র দুইশত পৃষ্ঠায় এত পঠিতব্য বিষয়ের একত্র সমাবেশ প্রায়ই দেখা যায় না।যাহারা মনে করেন সংস্কৃত -বহুল বাঙ্গলা ভাষায় অসংস্কৃতজ্ঞের পক্ষে লেখা বা বোঝা দুষ্কর তাঁহাদিগকে আমি এই পুস্তিকা পাঠ করিতে অনুরোধ করি। ভারতীয় ভূাবে অনুপ্রাণিত ও অনুপ্রবিষ্ট দার্শনিক লেখকের ভাষাসম্পদ সুধীবৃন্দকে মোহিত করিবে তাহাতে কোনও সন্দেহ নাই। বিষয়ের জটিলতাকে ভাষার সরলতা অনেক পরিমানে অপসারিত করিয়াছে। ভাষা ও ভাবের এইরূপ সাহচার্য্য সচরাচর দৃষ্ট হয় না। বঙ্গ সাহিত্যের নব জাগরণের দিনে যশস্বী লেখকের চিন্তাপ্রবাহ ভাবুক চিত্তকে সরস করুক ইহাই আমার আশা, ইচ্ছা ও প্রার্থনা। অলমতি বিস্তরণে।
শ্রীহরিদাস ভট্রাচার্য্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১লা আষাঢ় ১৩৪৫
বিষয়-সূচী * ভূমিকা * অনন্ত তৃষা * আদিম প্রেরণা * জীবন ও নীতি * ধ্রুব কোথায় * জড়বাদ * পরমাণু জগৎ ও প্রাণশক্তির উন্মোষ * চৈতন্যবাদ * বস্তুরূপ ও বস্তু * জীবন প্রবাহ * বিজ্ঞান যুগে ধর্ম ও সভ্যতা * পারমর্থিক জগৎ ও জীবন