র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ১৯৫৫ সনের ১ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর থানার চিনাইর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম মো. আব্দুর রউফ চৌধুরী। মাতা মরহুমা মোছাম্মৎ হালিমা খাতুন চৌধুরী। এক ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি পিতা-মাতার জ্যেষ্ঠ সন্তান। প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন চিনাইর ও নারায়ণগঞ্জে। এরপর মাদ্রাসা-ই-আলীয়া ঢাকা থেকে ফাজিল পাস করার পর ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স করেন। উল্লেখ্য যে, ঢাকা কলেজে পড়াকালীন তিনি ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সেই সূত্রে ১৯৬৯ সনে ঢাকা কলেজের ইতিহাসে প্রথম সরাসরি ভোটে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সনে ছিলেন তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭১ সনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে মুজিববাহিনীর একজন ‘লীডার’ হিসেবে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং আহত হন। ১৯৭৫ সনে বাকশাল গঠন হলে ২১ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য মনোনীত হন। ১৯৭৩-৭৪ সনে ছিলেন ছাত্রলীগÑ ছাত্র ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত ছাত্রসমাজের শিক্ষা কমিশনের সদস্য। ১৯৭৫ সনে জাতির জনক শাহাদাত বরণ করলে দেশব্যাপী গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলন ও প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখেন। ১৯৭৬ সনে পলাতক থাকা অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করে ফেরার পথে নিউ মার্কেট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৩ মাস কারান্তরালে কাটান। কারাগারে থাকা অবস্থায় অনার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে পাস করেন। কারাগার থেকে বেরিয়ে তিনি ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং স্বল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। ১৯৮১ সনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ২য় শ্রেণীতে ৪র্থ অবস্থান নিয়ে মাস্টার্স করেন। এই সময়ে তিনি সারা দেশে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করতে নিরলস কাজ করে যান। ১৯৮৩ সনে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। ম্যাজিস্ট্রেট, এনডিসি, জেল সুপার ইত্যাদি পদে চাকরি করেন। ১৯৮৬ সনে জননেত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে জাতীয় সংসদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পূর্ত, শিক্ষা, মহিলা ও শিশু বিষয়ক, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতা ও যোগ্যতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ এর পর জামাত-বিএনপি জোট সরকারের আমলে তাঁর উপর নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে। উল্লেখ্য যে, ২০০১ এর নির্বাচনী ইশতেহারে তাঁর নামোল্লেখ করে বিএনপি তাঁকে অন্যদের সাথে মিলিয়ে টার্গেট করেছিল। ২০০৫ সনের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি রাজনীতিতে যোগ দিতে চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন। ২০০৬ সনের অক্টোবরে ২৫ মাস পর তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়। ২০০৬ সনে তিনি জাতীয় নির্বাচনের জন্য মহাজোটের মনোনয়ন পান এবং নেত্রীর নির্দেশে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন। ২০০৮ সনে জাতীয় নির্বাচনে আইনি জটিলতার কারণে তিনি মনোনয়নে বঞ্চিত হন। ২০১০ সনের নভেম্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইন্তেকাল করলে ২০১১ এর ২৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটাধিক্যে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। এছাড়া বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেসনালস্ এর সিনেট সদস্য। তিনি একজন একনিষ্ঠ সমাজকর্মী, শিক্ষানুরাগী, সংস্কৃতি মনস্ক মানুষ হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। নিজ গ্রাম চিনাইরে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ডিগ্রি কলেজ’। এছাড়া বহু প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি পাক্ষিক ‘মত ও পথ’ সাময়িকীর প্রকাশক ও সম্পাদক। রাজনীতি ও কর্মজীবনে তিনি বিশ্বের বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন। তাঁর স্ত্রী মিসেস ফাহিমা খাতুন একজন অধ্যাপক। বর্তমানে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। একমাত্র কন্যা মুহসিনা ফারহাত চৌধুরী অন্বেষা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন। সে বর্তমানে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স-এর রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট।